১১:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন ফ্লোটিলা এত আলোচনায়

  • Sangbad365 Admin
  • সময়ঃ ১২:০২:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৬০৬৩ Time View

সুমুদ ফ্লোটিলা এবং সেখানে বাংলাদেশের সম্পৃক্ত হওয়ার খবরে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যম সয়লাব। সেখানে কেবল যে উৎসাহিত করা হচ্ছে তাই নয়, আছে সমালোচনার পোস্টও। কিন্তু এবারই কি প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ, আগে কখনও এত আলোচনা হয়নি কেন।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০১০ সাল থেকে গাজাতেই বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছে ফ্লোটিলা বাহিনী। সেসব বহরে সাংবাদিক, অধিকারকর্মীরা একেবারেই থাকতেন না তা নয়, এবার মিডিয়া ফ্লোটিলা ব্যাপারটাকে আলাদা করে অধিকসংখ্যক অধিকাকরকর্মীকে যুক্ত করা সম্ভব হওয়ায় যাত্রাটি বিশেষত্ব পেয়েছে। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনের গণহত্যা নিয়ে প্রতিদিনের হত্যাচিত্র দেখে এ বিশ্বের মানবিক মানুষেরা দেশটির পক্ষে সংগঠিতভাবে আওয়াজ তোলা শুরু করেছে। এ কারণেও এবারের এই যাত্রা অনেক বেশি মনোযোগ ও সমর্থন পেয়েছে।

২০১০ সাল থেকে গাজাতেই বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছে ফ্লোটিলা বাহিনী

এবারই কি প্রথম

এবারই প্রথম নয়, ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ বা ‘গাজার ফ্লোটিলা’ নামে আন্তর্জাতিকভাবে একাধিকবার জাহাজ পাঠানো হয়েছে গাজার অবরোধ ভাঙতে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ২০১০ সালের ‘গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা’। সেইবার তুর্কি বেসরকারি সংস্থা আইএইচএইচ’র নেতৃত্বে ছয়টি জাহাজ গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে রওনা দিয়েছিল। ইসরায়েলি সেনারা আন্তর্জাতিক জলসীমায় আক্রমণ করার কারণে সেই বহরের অন্তত ৯ জন নিহত হন। এরপর ২০১১-২০২৩ পর্যন্ত অনেকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছোট আকারে একাধিক ফ্লোটিলা চেষ্টা করা হয়, তবে ইসরায়েল প্রায় সবগুলো আটকায় বা গাজায় পৌঁছাতে দেয়নি। এবার গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এ বহরে যুক্ত হয়। এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরবর্তী সময়ে ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয় আরও কিছু নৌযান।

এবারে বহরে কেন চোখ

এবারের বহরে যারা আছেন তারা প্রত্যেকে যার যার কাজ দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করেছেন বহু আগেই। বহরও বেশ বড়। সেখানে বিখ্যাত সব মানুষ গাজা অবরোধ ভাঙবেন আশায় রওনা হয়েছেন। উল্লেখ্য, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান আছে। এ বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষ আছেন। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক আছেন।

আলোচচিত্রী শহীদুল আলম

বহরে আছেন, সুইডিশ জলবায়ুকর্মী ও ফ্লোটিলার স্টিয়ারিং কমিটির একজন সদস্য গ্রেটা থুনবার্গ, নেলসন ম্যান্ডেলার ছেলে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিচিত ব্যক্তি ও রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য মাণ্ডলা ম্যান্ডেলা। ব্রাজিলীয় অ্যাক্টিভিস্ট ও সুমুদ ফ্লোটিলার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য খিয়গো, স্পেনের বার্সেলোনার প্রাক্তন মেয়র এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সামাজিক ন্যায্যতা আদায়ে সোচ্চার নেত্রী আদা কোলাউ এবং বাংলাদেশের আলোচচিত্রী শহীদুল আলম। অন্য যেকোনবারের তুলনায় এবার যাত্রাপথের প্রতিটি মুহূর্তের ছবি, পরিস্থিতি, আবহাওয়ার সঙ্গে যে যুদ্ধ, কীভাবে বহরের আগের অংশ হামলার শিকার হলে পিছনের অংশ কৌশল ঠিক করে সবকিছু মানুষের সামনে হাজির হচ্ছে। ফলে আগ্রহী সহানুভূতিশীল মানুষ জানছেন তারা কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের কাজ নিজেরা করে, শত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে অবরোধ ভাঙতে এগিয়ে চলেছেন।

কারা যুক্ত হয় কারা আয়োজক

২০১৪ সালে গাজার অবরোধ ভাঙার জন্য রওনা দেওয়া ফিলিস্তিনিপন্থী মানবাধিকার কর্মীদের বহনকারী জাহাজ দ্য মাভি মারমারা/সংগৃহীত

মূল উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) নামে একটি আন্তর্জাতিক সমবায় বা জোটের মাধ্যমে। এফএফসি গঠিত হয়েছিল ২০১০ সালে গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা অভিযান শেষে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন সমর্থন সংগঠনকে একসঙ্গে সমন্বয় করা। প্রথম গঠনতালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল ফ্রি গাজা মুভমেন্ট, ইউরোপিয়ান ক্যাম্পেইন টু অ্যান্ড দ্য সিজ অন গাজা, তুরস্কের আইএইচএইচ। সাম্প্রতিক গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ক্ষেত্রে এফএফসি ছাড়াও আরও কিছু সংগঠন যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে আছে– গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মেহরাব সুমুদ ফ্লোটিলা, সুমুদ নুসানতারা। এসব সংগঠন সাধারণত রাজনৈতিক দল নয়; অধিকাংশই নাগরিক সমাজ, অধিকার আন্দোলন, পার্টনার এনজিও, সোলিডারিটি গ্রুপ। তবে পুরো উদ্যোগের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সমর্থন রয়েছে বলেও তথ্য সম্প্রচারের চেষ্টা দেখা যায়। ইসরায়েলের দাবি, তারা অস্ত্র পাচার ঠেকাতে ২০০৯ সাল থেকে নৌ অবরোধ চালু রেখেছে। এ ছাড়া ফ্লোটিলা নৌবহরের ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে ইসরায়েল। যদিও এর পক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

ট্যাগঃ

কেন ফ্লোটিলা এত আলোচনায়

সময়ঃ ১২:০২:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

সুমুদ ফ্লোটিলা এবং সেখানে বাংলাদেশের সম্পৃক্ত হওয়ার খবরে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যম সয়লাব। সেখানে কেবল যে উৎসাহিত করা হচ্ছে তাই নয়, আছে সমালোচনার পোস্টও। কিন্তু এবারই কি প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ, আগে কখনও এত আলোচনা হয়নি কেন।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০১০ সাল থেকে গাজাতেই বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছে ফ্লোটিলা বাহিনী। সেসব বহরে সাংবাদিক, অধিকারকর্মীরা একেবারেই থাকতেন না তা নয়, এবার মিডিয়া ফ্লোটিলা ব্যাপারটাকে আলাদা করে অধিকসংখ্যক অধিকাকরকর্মীকে যুক্ত করা সম্ভব হওয়ায় যাত্রাটি বিশেষত্ব পেয়েছে। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনের গণহত্যা নিয়ে প্রতিদিনের হত্যাচিত্র দেখে এ বিশ্বের মানবিক মানুষেরা দেশটির পক্ষে সংগঠিতভাবে আওয়াজ তোলা শুরু করেছে। এ কারণেও এবারের এই যাত্রা অনেক বেশি মনোযোগ ও সমর্থন পেয়েছে।

২০১০ সাল থেকে গাজাতেই বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছে ফ্লোটিলা বাহিনী

এবারই কি প্রথম

এবারই প্রথম নয়, ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ বা ‘গাজার ফ্লোটিলা’ নামে আন্তর্জাতিকভাবে একাধিকবার জাহাজ পাঠানো হয়েছে গাজার অবরোধ ভাঙতে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ২০১০ সালের ‘গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা’। সেইবার তুর্কি বেসরকারি সংস্থা আইএইচএইচ’র নেতৃত্বে ছয়টি জাহাজ গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে রওনা দিয়েছিল। ইসরায়েলি সেনারা আন্তর্জাতিক জলসীমায় আক্রমণ করার কারণে সেই বহরের অন্তত ৯ জন নিহত হন। এরপর ২০১১-২০২৩ পর্যন্ত অনেকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছোট আকারে একাধিক ফ্লোটিলা চেষ্টা করা হয়, তবে ইসরায়েল প্রায় সবগুলো আটকায় বা গাজায় পৌঁছাতে দেয়নি। এবার গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এ বহরে যুক্ত হয়। এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরবর্তী সময়ে ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয় আরও কিছু নৌযান।

এবারে বহরে কেন চোখ

এবারের বহরে যারা আছেন তারা প্রত্যেকে যার যার কাজ দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করেছেন বহু আগেই। বহরও বেশ বড়। সেখানে বিখ্যাত সব মানুষ গাজা অবরোধ ভাঙবেন আশায় রওনা হয়েছেন। উল্লেখ্য, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান আছে। এ বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষ আছেন। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক আছেন।

আলোচচিত্রী শহীদুল আলম

বহরে আছেন, সুইডিশ জলবায়ুকর্মী ও ফ্লোটিলার স্টিয়ারিং কমিটির একজন সদস্য গ্রেটা থুনবার্গ, নেলসন ম্যান্ডেলার ছেলে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিচিত ব্যক্তি ও রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য মাণ্ডলা ম্যান্ডেলা। ব্রাজিলীয় অ্যাক্টিভিস্ট ও সুমুদ ফ্লোটিলার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য খিয়গো, স্পেনের বার্সেলোনার প্রাক্তন মেয়র এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সামাজিক ন্যায্যতা আদায়ে সোচ্চার নেত্রী আদা কোলাউ এবং বাংলাদেশের আলোচচিত্রী শহীদুল আলম। অন্য যেকোনবারের তুলনায় এবার যাত্রাপথের প্রতিটি মুহূর্তের ছবি, পরিস্থিতি, আবহাওয়ার সঙ্গে যে যুদ্ধ, কীভাবে বহরের আগের অংশ হামলার শিকার হলে পিছনের অংশ কৌশল ঠিক করে সবকিছু মানুষের সামনে হাজির হচ্ছে। ফলে আগ্রহী সহানুভূতিশীল মানুষ জানছেন তারা কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের কাজ নিজেরা করে, শত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে অবরোধ ভাঙতে এগিয়ে চলেছেন।

কারা যুক্ত হয় কারা আয়োজক

২০১৪ সালে গাজার অবরোধ ভাঙার জন্য রওনা দেওয়া ফিলিস্তিনিপন্থী মানবাধিকার কর্মীদের বহনকারী জাহাজ দ্য মাভি মারমারা/সংগৃহীত

মূল উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) নামে একটি আন্তর্জাতিক সমবায় বা জোটের মাধ্যমে। এফএফসি গঠিত হয়েছিল ২০১০ সালে গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা অভিযান শেষে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন সমর্থন সংগঠনকে একসঙ্গে সমন্বয় করা। প্রথম গঠনতালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল ফ্রি গাজা মুভমেন্ট, ইউরোপিয়ান ক্যাম্পেইন টু অ্যান্ড দ্য সিজ অন গাজা, তুরস্কের আইএইচএইচ। সাম্প্রতিক গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ক্ষেত্রে এফএফসি ছাড়াও আরও কিছু সংগঠন যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে আছে– গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মেহরাব সুমুদ ফ্লোটিলা, সুমুদ নুসানতারা। এসব সংগঠন সাধারণত রাজনৈতিক দল নয়; অধিকাংশই নাগরিক সমাজ, অধিকার আন্দোলন, পার্টনার এনজিও, সোলিডারিটি গ্রুপ। তবে পুরো উদ্যোগের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সমর্থন রয়েছে বলেও তথ্য সম্প্রচারের চেষ্টা দেখা যায়। ইসরায়েলের দাবি, তারা অস্ত্র পাচার ঠেকাতে ২০০৯ সাল থেকে নৌ অবরোধ চালু রেখেছে। এ ছাড়া ফ্লোটিলা নৌবহরের ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে ইসরায়েল। যদিও এর পক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি।