রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) ভোটগ্রহণ হবে। বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম এই সংশোধিত তফসিল ঘোষণা করেন।
তবে ভোটের দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার। ফলে ভোটে তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে সনাতনীদের পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
সনাতনী শিক্ষার্থী সৌরভ কর্মকার বলেন, ‘এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়, ওই সময়ে ক্যাম্পাস ফাঁকা থাকবে। তাহলে ভোট দেবে কারা? আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাবো, যেন ভোটের অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত না হয়।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উৎসব ছেড়ে ভোট দিতে আসবেন না। কৌশলে তাদেরকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। ২৯ তারিখ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি থাকায় আরও অনেকে বাড়ি চলে যাবে। এতে নির্বাচন থেকে শিক্ষার্থীদের বড় অংশ বাদ পড়বে। এতে একটি গোষ্ঠী সুবিধা পেতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার সনাতনী শিক্ষার্থী ভাইবোন রয়েছে। তাদের উৎসবের দিনে এই নির্বাচন হতে পারে না। এটা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। নির্দিষ্ট দলের দাবি-দাওয়া মেনে একতরফাভাবে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, কমিশন এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব ও ক্যাম্পাস ছুটির আগের দিনে রাকসুর ভোট নির্ধারণ কোনও কাকতালীয় নয়, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র। এতে হিন্দু শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কঠিন করা হয়েছে এবং ছাত্রদলকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই ভ্রাতৃত্ব-বিরোধী মানসিকতাকে ধিক্কার!’
ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ কায়সার আহমেদ বলেন, ‘মনোনয়ন বিতরণ ও ভোটের তারিখ পেছানোর পেছনে দুটো লেজুড়বৃত্তিক সংগঠনের ভূমিকা রয়েছে। মহাষষ্ঠীর দিনে ভোট নির্ধারণ অত্যন্ত দুঃখজনক। তখন ক্যাম্পাসের বড় অংশ অনুপস্থিত থাকবে। এতে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।’
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘২৮ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকবে। পূজা অক্টোবরে শুরু হচ্ছে, তাই পূজার ছুটি মাথায় রেখেই ভোটের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।’
এ বছর পঞ্জিকা অনুসারে, দুর্গাপূজার মহাপঞ্চমী হবে ২৭ সেপ্টেম্বর। আর ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী, ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী, ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর মহাদশমী হবে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে দশমীর দিন সরকারি ছুটি থাকে। তার আগে ২১ সেপ্টেম্বর পড়েছে মহালয়া; ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিপদ তিথি।
সংশোধিত এই তফসিলে ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণের সময়সীমা রাখা হয়েছে। ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন দাখিল, ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন বাছাই, ১১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ১৪ সেপ্টেম্বর আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ১৫ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং ১৬ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
রাকসু ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে এবং হল সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংশ্লিষ্ট হলের প্রশাসনিক কার্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা যাবে।
২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ভবনে ভোটগ্রহণ হবে। সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।