০৩:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সমাধান কোন পথে

  • Sangbad365 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৬০১৭ Time View

তিন দফা দাবিতে কিছু দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে বুধবার (২৭ আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকার দাবিগুলো পর্যালোচনা করার জন্য কমিটি গঠন করে। দিনভর আন্দোলন শেষে রাতে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সরকারের দুই উপদেষ্টা। তবে কোনও সমাধান ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) পুরো কমিটি আবারও বৈঠকে বসবে। আর বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে আন্দোলনরত সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে। 

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দাবি

বুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে আছে—১. নবম গ্রেডে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নির্ধারিত ৩৩ শতাংশ কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে, ২. দশম গ্রেডে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য থাকা ১০০ শতাংশ কোটা বাতিল করে সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে এবং ৩.  বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ ইঞ্জিনিয়ার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না, করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ডিপ্লোমাধারীরা কোনও ধরনের বিসিএস পরীক্ষা না দিয়েই এবং যাদের বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা ‘স্নাতক’ নেই—তারাও শুধু প্রমোশনের মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাচ্ছেন। গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, রেলওয়ে, কারিগরি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরগুলোতে দশম গ্রেডের নন-ক্যাডার পোস্টে প্রবেশ করে ৫ বছর পর তারা বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাচ্ছেন।

তারা বলেন, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি বৈষম্যের আরেকটি চিত্র হলো—অবৈধ সিনিয়রিটি প্রদান। একই বছরে বিএসসি প্রকৌশলী আগে নিয়োগ পেলেও, যদি সেই বছরের শেষের দিকে কোনও ডিপ্লোমাধারী পদোন্নতি পান, তবে পরবর্তী সব পদোন্নতির ক্ষেত্রে সেই ডিপ্লোমাধারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এটি সুস্পষ্ট বৈষম্য এবং বিএসসি প্রকৌশলীদের জুনিয়র বানিয়ে রাখার এক অন্যায় প্রচেষ্টা। 

পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে আন্দোলনকারীরা, ছবি: নাসিরুল ইসলাম

শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির শুরু ছিল ক্লাস বর্জনের মাধ্যমে

২৩ আগস্ট নবম গ্রেডে ডিপ্লোমাধারীদের নিয়োগ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলে ৩ দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় ‘প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। তাতে সংহতি জানায় বুয়েটসহ অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। কর্মসূচির প্রথম ধাপে গত ২৪, ২৫ ও ২৬ আগস্ট ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।

শাহবাগ অবরোধ করে তিন দফা দাবি আদায়ে আল্টিমেটাম 

তিন দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচির পর মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) একাধিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে অংশ নেন। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় মিছিল নিয়ে এসে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তিন দাবিতে ‘ব্লকেড অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়েছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন আন্দোলনকারীরা

তিন দফা দাবির সঙ্গে ‘প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি এসেছে’—এমন অভিযোগ করে হুমকিদাতার বিচারের দাবিও জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা সরকারকে দাবি মেনে নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন। অবরোধের ৫ ঘণ্টা পর ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দিয়ে শাহবাগ ছেড়ে যান তারা। বুধবার (২৭ আগস্ট) আবারও সকাল ১০টা থেকে শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন তারা। এদিন সারা দেশের সব প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়ে যমুনা অভিমুখে মিছিল

বুধবার সকালে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে বুয়েট, চুয়েট, রুয়েট, কুয়েটসহ সারা দেশের প্রকৌশল ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এক ঘণ্টার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়। আন্দোলনকারীরা জানান, দাবি না মানলে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে। বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে এ ঘোষণা দেন প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল হক লিপু। সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এতে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে স্থাপিত পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং একপর্যায়ে পানি ছোড়া হয়। এতে শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করে। বাধার মুখে শিক্ষার্থীরা পরে শাহবাগ মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে অবস্থান নেন। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে ও লাঠিচার্জ করলে অন্তত ১০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, দুপুরের পর ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে আসেন। এদের মধ্যে শিক্ষার্থী নাফিসকে (২৫) বিকালে ভর্তি করা হয়। তার পেটে ‘স্প্লিন্টারের’ আঘাত রয়েছে। তিনি জানান, এ ছাড়া আরও ৬ শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন—সাদিব (২১), রিজন (২২), পিয়াল (২২), শাহাদাৎ (২২), নাভিদ (২১) ও সাদাত (২১)। 

বুয়েট শিক্ষার্থী ফাহিমুল আলম বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট দাবি—প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নে দ্রুত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। পাশাপাশি প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

অপরদিকে পুলিশের ৮ জন সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আহত পুলিশ সদস্যদের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা গুরুতর। আহতরা হলেন—ডিএমপি’র রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) রেজোয়ানুল ইসলাম (৩৭), এসআই তৌহিদুল ইসলাম, এএসআই ফরহাদ আলী (২৯), কনস্টেবল আদিব (২২), কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম (২০) ও কনস্টেবল শ্রাবণ (২০)। তাদের মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম ও আদিবের অবস্থা গুরুতর।

পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় আন্দোলনকারীরা, ছবি: নাসিরুল ইসলাম

শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জের নিন্দা জানান বুয়েটের ভিসি

আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভিসি অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তিনি বলেন, দাবি জানাতে যমুনা যাওয়ার সময় পুলিশ নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করেছে। সভ্য সমাজে এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ভিসি বলেন, শিক্ষার্থীদের কিছু যৌক্তিক দাবি নিয়ে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যমুনার উদ্দেশে যাচ্ছিল। তখন পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয় ব্যবস্থা নিতে আমি ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করি। এই দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরি। দায়িত্ব নিয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে বসে কমিটি গঠন করতে এবং বিষয়টির সমাধান করতে তাদের অনুরোধ করি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ সময় শিক্ষার্থীরা কমিটি মানি না বলে ওঠেন। পাশাপাশি ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। ভিসি বলেন, কমিটির বিষয়ে যদি কারও কোনও বক্তব্য থাকে বলেন। আমরা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করবো। এ সময় শিক্ষার্থীরা আবার বলে ওঠেন তাদের এখানে আসতে হবে।

বুয়েট ভিসি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় অনেকেই ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

আন্দোলন এড়িয়ে সমাধান সম্ভব বলে মনে করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের প্রয়োজন নেই। যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সংশ্লিষ্ট দফতরের মাধ্যমে পেশ করা হলে সহজেই সমাধান করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান। বুধবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা রাস্তা বন্ধ করে মানুষের ভোগান্তি করে যে আন্দোলন করছেন এটা ঠিক নয়। এটা বিচক্ষণতার কাজ নয়। তাদের দাবির বিষয় এখনও সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রস্তাব আসেনি। প্রস্তাব পেলে এ বিষয় সহজেই সমাধান সম্ভব।

শুধু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নয়, বুয়েটের এই দাবিগুলোর সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয় এবং পিএসসি জড়িত রয়েছে। সবাইকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলেও জানান মোখলেস উর রহমান।

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা যাচাইয়ে কমিটি

প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সুপারিশ প্রণয়নে কমিটি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ৮ সদস্যের এই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে। বুধবার (২৭ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন—শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইইবি) সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. তানভির মঞ্জুর। এছাড়া কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সওবা) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের নিমিত্ত কমিটি গঠন করেছে।  

আন্দোলনাকারীদের ওপর জলকামানে পানি ছোড়া হচ্ছে, ছবি: নাসিরুল ইসলাম

তিন দফা থেকে দাবি এখন পাঁচ দফায়

বিকাল ৫টার দিকে আন্দোলনকারীরা তিন দফা থেকে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বলেন, আজকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। সেই সঙ্গে জবাবদিহি করতে হবে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করলাম। সেই সঙ্গে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের পূর্বে ঘোষিত তিন দফা দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাহী আদেশে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে এবং তিন উপদেষ্টা ফওজুল করিম, আদিলুর রহমান ও সৈয়দা রেজওয়ান হাসানকে এখানে এসে নিশ্চয়তা নিতে হবে। হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খরচ বহন করতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যৌক্তিক আন্দোলনে আর কোনও হামলা করা যাবে না। আন্দোলনে অংশ নেওয়া রোকনের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি আজকের হামলায় জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

দ্রুত সমস্যার সমাধান করার আশ্বাস

যত দ্রুত সম্ভব আমরা বসে সমস্যার সমাধান করবো বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বুধবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধান করা হবে। আমরা হয়তো কালকেই বসে যাবো।

রাতে সমাধান ছাড়াই শেষ হয় বৈঠক

আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বুধবার রাতে বৈঠকে বসেন সরকারের দুই উপদেষ্টা—জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর রেলভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই উপদেষ্টার এ বৈঠক শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে কোনও সমাধান হয়নি। ফাওজুল কবির জানান, সমস্যা সমাধানে সাত সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, বৈঠকে তাদের পাঁচ জন অনুপস্থিত ছিলেন।  বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট)  পুরো কমিটি আবারও বৈঠকে বসবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বৈঠক হবে অংশীজন শিক্ষক এবং অন্য প্রকৌশলীদের সঙ্গে।

কথায় কথায় যমুনা অভিমুখে যাত্রা অনভিপ্রেত মন্তব্য করে ফাওজুল কবির বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ব্যাপারে ক্ষমা চাইবে পুলিশের প্রতিনিধি।

এদিকে বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা জানান, সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে আন্দোলনরত সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় খবর

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সমাধান কোন পথে

সময়ঃ ১২:০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

তিন দফা দাবিতে কিছু দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে বুধবার (২৭ আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকার দাবিগুলো পর্যালোচনা করার জন্য কমিটি গঠন করে। দিনভর আন্দোলন শেষে রাতে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সরকারের দুই উপদেষ্টা। তবে কোনও সমাধান ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) পুরো কমিটি আবারও বৈঠকে বসবে। আর বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে আন্দোলনরত সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে। 

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দাবি

বুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে আছে—১. নবম গ্রেডে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নির্ধারিত ৩৩ শতাংশ কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে, ২. দশম গ্রেডে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য থাকা ১০০ শতাংশ কোটা বাতিল করে সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে এবং ৩.  বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ ইঞ্জিনিয়ার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না, করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ডিপ্লোমাধারীরা কোনও ধরনের বিসিএস পরীক্ষা না দিয়েই এবং যাদের বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা ‘স্নাতক’ নেই—তারাও শুধু প্রমোশনের মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাচ্ছেন। গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, রেলওয়ে, কারিগরি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরগুলোতে দশম গ্রেডের নন-ক্যাডার পোস্টে প্রবেশ করে ৫ বছর পর তারা বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাচ্ছেন।

তারা বলেন, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি বৈষম্যের আরেকটি চিত্র হলো—অবৈধ সিনিয়রিটি প্রদান। একই বছরে বিএসসি প্রকৌশলী আগে নিয়োগ পেলেও, যদি সেই বছরের শেষের দিকে কোনও ডিপ্লোমাধারী পদোন্নতি পান, তবে পরবর্তী সব পদোন্নতির ক্ষেত্রে সেই ডিপ্লোমাধারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এটি সুস্পষ্ট বৈষম্য এবং বিএসসি প্রকৌশলীদের জুনিয়র বানিয়ে রাখার এক অন্যায় প্রচেষ্টা। 

পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে আন্দোলনকারীরা, ছবি: নাসিরুল ইসলাম

শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির শুরু ছিল ক্লাস বর্জনের মাধ্যমে

২৩ আগস্ট নবম গ্রেডে ডিপ্লোমাধারীদের নিয়োগ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলে ৩ দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় ‘প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। তাতে সংহতি জানায় বুয়েটসহ অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। কর্মসূচির প্রথম ধাপে গত ২৪, ২৫ ও ২৬ আগস্ট ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।

শাহবাগ অবরোধ করে তিন দফা দাবি আদায়ে আল্টিমেটাম 

তিন দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচির পর মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) একাধিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে অংশ নেন। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় মিছিল নিয়ে এসে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তিন দাবিতে ‘ব্লকেড অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়েছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন আন্দোলনকারীরা

তিন দফা দাবির সঙ্গে ‘প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি এসেছে’—এমন অভিযোগ করে হুমকিদাতার বিচারের দাবিও জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা সরকারকে দাবি মেনে নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন। অবরোধের ৫ ঘণ্টা পর ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দিয়ে শাহবাগ ছেড়ে যান তারা। বুধবার (২৭ আগস্ট) আবারও সকাল ১০টা থেকে শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন তারা। এদিন সারা দেশের সব প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়ে যমুনা অভিমুখে মিছিল

বুধবার সকালে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে বুয়েট, চুয়েট, রুয়েট, কুয়েটসহ সারা দেশের প্রকৌশল ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এক ঘণ্টার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়। আন্দোলনকারীরা জানান, দাবি না মানলে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে। বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে এ ঘোষণা দেন প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল হক লিপু। সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এতে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে স্থাপিত পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং একপর্যায়ে পানি ছোড়া হয়। এতে শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করে। বাধার মুখে শিক্ষার্থীরা পরে শাহবাগ মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে অবস্থান নেন। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে ও লাঠিচার্জ করলে অন্তত ১০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, দুপুরের পর ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে আসেন। এদের মধ্যে শিক্ষার্থী নাফিসকে (২৫) বিকালে ভর্তি করা হয়। তার পেটে ‘স্প্লিন্টারের’ আঘাত রয়েছে। তিনি জানান, এ ছাড়া আরও ৬ শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন—সাদিব (২১), রিজন (২২), পিয়াল (২২), শাহাদাৎ (২২), নাভিদ (২১) ও সাদাত (২১)। 

বুয়েট শিক্ষার্থী ফাহিমুল আলম বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট দাবি—প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নে দ্রুত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। পাশাপাশি প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

অপরদিকে পুলিশের ৮ জন সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আহত পুলিশ সদস্যদের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা গুরুতর। আহতরা হলেন—ডিএমপি’র রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) রেজোয়ানুল ইসলাম (৩৭), এসআই তৌহিদুল ইসলাম, এএসআই ফরহাদ আলী (২৯), কনস্টেবল আদিব (২২), কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম (২০) ও কনস্টেবল শ্রাবণ (২০)। তাদের মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম ও আদিবের অবস্থা গুরুতর।

পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় আন্দোলনকারীরা, ছবি: নাসিরুল ইসলাম

শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জের নিন্দা জানান বুয়েটের ভিসি

আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভিসি অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তিনি বলেন, দাবি জানাতে যমুনা যাওয়ার সময় পুলিশ নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করেছে। সভ্য সমাজে এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ভিসি বলেন, শিক্ষার্থীদের কিছু যৌক্তিক দাবি নিয়ে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যমুনার উদ্দেশে যাচ্ছিল। তখন পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয় ব্যবস্থা নিতে আমি ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করি। এই দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরি। দায়িত্ব নিয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে বসে কমিটি গঠন করতে এবং বিষয়টির সমাধান করতে তাদের অনুরোধ করি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ সময় শিক্ষার্থীরা কমিটি মানি না বলে ওঠেন। পাশাপাশি ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। ভিসি বলেন, কমিটির বিষয়ে যদি কারও কোনও বক্তব্য থাকে বলেন। আমরা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করবো। এ সময় শিক্ষার্থীরা আবার বলে ওঠেন তাদের এখানে আসতে হবে।

বুয়েট ভিসি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় অনেকেই ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

আন্দোলন এড়িয়ে সমাধান সম্ভব বলে মনে করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের প্রয়োজন নেই। যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সংশ্লিষ্ট দফতরের মাধ্যমে পেশ করা হলে সহজেই সমাধান করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান। বুধবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা রাস্তা বন্ধ করে মানুষের ভোগান্তি করে যে আন্দোলন করছেন এটা ঠিক নয়। এটা বিচক্ষণতার কাজ নয়। তাদের দাবির বিষয় এখনও সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রস্তাব আসেনি। প্রস্তাব পেলে এ বিষয় সহজেই সমাধান সম্ভব।

শুধু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নয়, বুয়েটের এই দাবিগুলোর সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয় এবং পিএসসি জড়িত রয়েছে। সবাইকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলেও জানান মোখলেস উর রহমান।

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা যাচাইয়ে কমিটি

প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সুপারিশ প্রণয়নে কমিটি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ৮ সদস্যের এই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে। বুধবার (২৭ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন—শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইইবি) সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. তানভির মঞ্জুর। এছাড়া কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সওবা) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের নিমিত্ত কমিটি গঠন করেছে।  

আন্দোলনাকারীদের ওপর জলকামানে পানি ছোড়া হচ্ছে, ছবি: নাসিরুল ইসলাম

তিন দফা থেকে দাবি এখন পাঁচ দফায়

বিকাল ৫টার দিকে আন্দোলনকারীরা তিন দফা থেকে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বলেন, আজকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। সেই সঙ্গে জবাবদিহি করতে হবে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করলাম। সেই সঙ্গে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের পূর্বে ঘোষিত তিন দফা দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাহী আদেশে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে এবং তিন উপদেষ্টা ফওজুল করিম, আদিলুর রহমান ও সৈয়দা রেজওয়ান হাসানকে এখানে এসে নিশ্চয়তা নিতে হবে। হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খরচ বহন করতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যৌক্তিক আন্দোলনে আর কোনও হামলা করা যাবে না। আন্দোলনে অংশ নেওয়া রোকনের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি আজকের হামলায় জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

দ্রুত সমস্যার সমাধান করার আশ্বাস

যত দ্রুত সম্ভব আমরা বসে সমস্যার সমাধান করবো বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বুধবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধান করা হবে। আমরা হয়তো কালকেই বসে যাবো।

রাতে সমাধান ছাড়াই শেষ হয় বৈঠক

আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বুধবার রাতে বৈঠকে বসেন সরকারের দুই উপদেষ্টা—জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর রেলভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই উপদেষ্টার এ বৈঠক শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে কোনও সমাধান হয়নি। ফাওজুল কবির জানান, সমস্যা সমাধানে সাত সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, বৈঠকে তাদের পাঁচ জন অনুপস্থিত ছিলেন।  বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট)  পুরো কমিটি আবারও বৈঠকে বসবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বৈঠক হবে অংশীজন শিক্ষক এবং অন্য প্রকৌশলীদের সঙ্গে।

কথায় কথায় যমুনা অভিমুখে যাত্রা অনভিপ্রেত মন্তব্য করে ফাওজুল কবির বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ব্যাপারে ক্ষমা চাইবে পুলিশের প্রতিনিধি।

এদিকে বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা জানান, সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে আন্দোলনরত সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে।