০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জিতলে নিউ ইয়র্ক শহরে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করব: মামদানি

  • Sangbad365 Admin
  • সময়ঃ ১২:০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৬০০১ Time View

নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শহরে প্রবেশ করলে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগকে (এনওয়াইপিডি) দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করাবেন।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, “এটা এমন কিছু, যা আমি বাস্তবায়ন করতে চাই।”

যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) স্বীকৃতি দেয় না যুক্তরাষ্ট্র, তবে মামদানির ব্যাখ্যা হলো, তিনি আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে সম্মান করবেন এবং নিউ ইয়র্কের বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করাবেন।

আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে।

জোহরান মামদানি বলেন, “আমি চাই এই শহর (নিউ ইয়র্ক) আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে দাঁড়াক।”

নিউ ইয়র্ক বিশ্বে ইহুদিদের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবাসস্থল। মামদানি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত তিনি যখন ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ স্লোগানকে নিন্দাই জানাননি। যদিও তিনি বলেছিলেন, স্লোগানটির ব্যবহার তিনি নিরুৎসাহিত করবেন।

তবে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইনের পরিপন্থি হতে পারে এবং বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। প্রথমত, তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে শহর বা রাজ্যের কোনো আইন ভঙ্গ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি যদি অপরাধে অভিযুক্তও হন, রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার কারণে তাকে কূটনৈতিক দায়মুক্তি দেওয়া হবে।

আগামী নভেম্বরে মেয়র নির্বাচনে এগিয়ে থাকা নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি বলেছেন, ফেডারেল সরকার যেখানে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে রাজ্য ও স্থানীয় ডেমোক্র্যাটদের উদ্যোগী হতে হবে।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটা এমন এক সময় যখন নেতৃত্বের জন্য আমরা ফেডারেল সরকারের দিকে তাকাতে পারি না। এটা এমন এক মুহূর্ত যখন শহর ও রাজ্যগুলোকে দেখাতে হবে কীভাবে নিজেদের মূল্যবোধ, নিজেদের জনগণের পাশে দাঁড়ানো যায়।”

মামদানি উদাহরণ টেনে বলেন, ২০০৪ সালে স্যান ফ্রান্সিসকোর মেয়র হিসেবে গ্যাভিন নিউসম ফেডারেল আইন অমান্য করে সমলিঙ্গ দম্পতিদের বিয়ের লাইসেন্স দিয়েছিলেন।

তিনি আরো জানান, ২০২৩ সালে যার বিরুদ্ধে আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল, সেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার।

তবে কলাম্বিয়া ল’ স্কুলের অধ্যাপক ম্যাথিউ সি. ওয়াক্সম্যান নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, মামদানির এই পরিকল্পনা ‘আইন প্রয়োগের নীতির চেয়ে রাজনৈতিক কৌশল বেশি’, এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এ ধরনের গ্রেপ্তারের নজির নেই।

গত জুলাইয়ে হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, মামদানির গ্রেপ্তার হুমকিকে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, “দেখো, দুনিয়ায় যথেষ্ট পাগলামিই হচ্ছে, মনে হয় সেটা কখনোই শেষ হবে না।” 

এরপর তিনি মন্তব্য করেন, “এটা অনেক দিক থেকে হাস্যকর, কারণ এটা একেবারেই সিরিয়াস কিছু নয়।”

“আমি সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে আসব, দেখা যাবে কী হয়,” বলেন নেতানিয়াহু।

নেতানিয়াহুর সুরে সুর মিলিয়ে ট্রাম্প মামদানিকে উদ্দেশ্য করে যোগ করেন, “ওর ভালো আচরণ করা উচিত। না হলে ও বড় সমস্যায় পড়বে।”

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, হামাস অস্ত্র ত্যাগ ও ৭ অক্টোবরের হামলায় নেওয়া জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। 

তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিন নামে কোনো রাষ্ট্রই থাকবে না।

নেতানিয়াহুর এই হুংকারের পর জোহরান মামদানি তাতে গ্রেপ্তারের হুমকি দিলেন। 

জোহরান মামদানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। মুসলিমবিদ্বেষ ও ফিলিস্তিনি গণহত্যার বিরুদ্ধে ব্যাপক সোচ্চার এই তরুণ নেতা। অবশ্য, ট্রাম্প তাকে পাগল বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন। যদিও নিউ ইয়র্ক শহরে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে মামদানির। 

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় খবর

জিতলে নিউ ইয়র্ক শহরে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করব: মামদানি

সময়ঃ ১২:০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শহরে প্রবেশ করলে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগকে (এনওয়াইপিডি) দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করাবেন।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, “এটা এমন কিছু, যা আমি বাস্তবায়ন করতে চাই।”

যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) স্বীকৃতি দেয় না যুক্তরাষ্ট্র, তবে মামদানির ব্যাখ্যা হলো, তিনি আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে সম্মান করবেন এবং নিউ ইয়র্কের বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করাবেন।

আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে।

জোহরান মামদানি বলেন, “আমি চাই এই শহর (নিউ ইয়র্ক) আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে দাঁড়াক।”

নিউ ইয়র্ক বিশ্বে ইহুদিদের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবাসস্থল। মামদানি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত তিনি যখন ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ স্লোগানকে নিন্দাই জানাননি। যদিও তিনি বলেছিলেন, স্লোগানটির ব্যবহার তিনি নিরুৎসাহিত করবেন।

তবে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইনের পরিপন্থি হতে পারে এবং বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। প্রথমত, তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে শহর বা রাজ্যের কোনো আইন ভঙ্গ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি যদি অপরাধে অভিযুক্তও হন, রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার কারণে তাকে কূটনৈতিক দায়মুক্তি দেওয়া হবে।

আগামী নভেম্বরে মেয়র নির্বাচনে এগিয়ে থাকা নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি বলেছেন, ফেডারেল সরকার যেখানে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে রাজ্য ও স্থানীয় ডেমোক্র্যাটদের উদ্যোগী হতে হবে।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটা এমন এক সময় যখন নেতৃত্বের জন্য আমরা ফেডারেল সরকারের দিকে তাকাতে পারি না। এটা এমন এক মুহূর্ত যখন শহর ও রাজ্যগুলোকে দেখাতে হবে কীভাবে নিজেদের মূল্যবোধ, নিজেদের জনগণের পাশে দাঁড়ানো যায়।”

মামদানি উদাহরণ টেনে বলেন, ২০০৪ সালে স্যান ফ্রান্সিসকোর মেয়র হিসেবে গ্যাভিন নিউসম ফেডারেল আইন অমান্য করে সমলিঙ্গ দম্পতিদের বিয়ের লাইসেন্স দিয়েছিলেন।

তিনি আরো জানান, ২০২৩ সালে যার বিরুদ্ধে আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল, সেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার।

তবে কলাম্বিয়া ল’ স্কুলের অধ্যাপক ম্যাথিউ সি. ওয়াক্সম্যান নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, মামদানির এই পরিকল্পনা ‘আইন প্রয়োগের নীতির চেয়ে রাজনৈতিক কৌশল বেশি’, এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এ ধরনের গ্রেপ্তারের নজির নেই।

গত জুলাইয়ে হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, মামদানির গ্রেপ্তার হুমকিকে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, “দেখো, দুনিয়ায় যথেষ্ট পাগলামিই হচ্ছে, মনে হয় সেটা কখনোই শেষ হবে না।” 

এরপর তিনি মন্তব্য করেন, “এটা অনেক দিক থেকে হাস্যকর, কারণ এটা একেবারেই সিরিয়াস কিছু নয়।”

“আমি সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে আসব, দেখা যাবে কী হয়,” বলেন নেতানিয়াহু।

নেতানিয়াহুর সুরে সুর মিলিয়ে ট্রাম্প মামদানিকে উদ্দেশ্য করে যোগ করেন, “ওর ভালো আচরণ করা উচিত। না হলে ও বড় সমস্যায় পড়বে।”

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, হামাস অস্ত্র ত্যাগ ও ৭ অক্টোবরের হামলায় নেওয়া জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। 

তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিন নামে কোনো রাষ্ট্রই থাকবে না।

নেতানিয়াহুর এই হুংকারের পর জোহরান মামদানি তাতে গ্রেপ্তারের হুমকি দিলেন। 

জোহরান মামদানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। মুসলিমবিদ্বেষ ও ফিলিস্তিনি গণহত্যার বিরুদ্ধে ব্যাপক সোচ্চার এই তরুণ নেতা। অবশ্য, ট্রাম্প তাকে পাগল বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন। যদিও নিউ ইয়র্ক শহরে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে মামদানির।