০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লন্ডনে উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর হামলা চেষ্টার নিন্দা অন্তর্বর্তী সরকারের

  • Sangbad365 Admin
  • সময়ঃ ১২:০১:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৬০০২ Time View

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় তার ওপর হামলা চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস। 

শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে সাড়ে ১১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়, যেখানে উপদেষ্টা মাহফুজের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসওএএস-ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে বাংলাদেশের জুলাই গণআন্দোলনের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি কর্মসূচি থেকে বের হওয়ার সময় উপদেষ্টা মাহফুজকে লক্ষ্য করে একদল বিক্ষোভকারী বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়িতে ডিম ছোড়ে এবং কিছু সময়ের জন্য গাড়ির পথরোধ করার চেষ্টা করে। লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে; প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আক্রমণের শিকার হওয়া গাড়িতে মাফজুল আলম ছিলেন না।

বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, এই ঘটনায় লন্ডন পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছে এবং উপদেষ্টার কর্মসূচিগুলোতে ‌পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে।

বিবৃতিতে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে, লন্ডনের এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে নিউ ইয়র্কে মাহফুজ আলমের ওপর হামলা হয়েছিল। সেখানে সরকারি কাজে অবস্থানকালে বাংলাদেশের কনসু্যলেট জেনারেলে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারীরা ডিম (এবং একাধিক সূত্র অনুযায়ী বোতলও) ছোড়ে ও কাচের দরজা ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, এমনকি স্টেট ডিপার্টমেন্টের স্থানীয় অফিসেও চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রকাশ্যে এই হামলার চেষ্টার নিন্দা জানান। সরকার এই সর্বশেষ হামলার নিন্দা জানাচ্ছে একই দৃঢ়তায়, যেভাবে নিউ ইয়র্কের ঘটনায় জানানো হয়েছিল। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের সরকার, বাংলাদেশের জনগণ এবং স্বাগতিক উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ সভ্যতার পাশে দাঁড়ায়, আর সন্ত্রাসীরা অবস্থান করে বর্বরতা ও দমননীতির অন্ধকার জগতে।

এই ধরনের আচরণের কোনো স্থান নেই গণতন্ত্রে, যেখানে তর্কের জায়গা সহিংসতার ওপরে, আর বিতর্কের জায়গা গুন্ডামির ওপর, বলা হয় বিবৃতিতে। 

এতে আরো বলা হয়, যেমনটি নিউ ইয়র্কের ঘটনার পর বলা হয়েছিল, সহিংসতা কোনো প্রতিবাদ নয়; ভয় দেখানো মুক্ত মতপ্রকাশ নয়। এই কথাগুলো লন্ডনের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য।

আমরা আবার সেই নীতি পুনর্ব্যক্ত করছি, যা নিউ ইয়র্কের ঘটনার পর জোর দিয়ে বলা হয়েছিল: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার গণতন্ত্রের মূলভিত্তি কিন্তু এগুলো দায়িত্ব ও সম্মানের সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে।

কনস্যুলেটের গাড়িকে লক্ষ্য করা বা তার গতিপথ আটকানোর চেষ্টা শুধু বেপরোয়া কাজই নয়, বরং এটি এমন সব আন্তর্জাতিক প্রথাকে আঘাত করে, যা জাতিগুলোর মধ্যে সংলাপকে সুরক্ষিত রাখে না। আমরা (লন্ডন) মেট্রোপলিটন পুলিশের পদক্ষেপকে স্বীকৃতি জানাই এবং দোষীদের শনাক্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে অব্যাহত সমন্বয়ের আহ্বান জানাই।

যারা এই আচরণ সংগঠিত করেছে বা এতে সহায়তা করেছে, তাদের প্রতি বার্তা: প্রাপ্তবয়স্ক হোন। যদি আপনারা নিজেদের দাবিতে বিশ্বাস করেন, তবে তা শান্তিপূর্ণ, আইনসঙ্গত ও মর্যাদাপূর্ণভাবে উপস্থাপন করুন। ডিম, মুষ্টি ও ভিড়ের প্রদর্শনী কাউকে বোঝাতে পারে না; এগুলো শুধু প্রমাণ করে আপনার আর কোনো যুক্তি অবশিষ্ট নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়, ভেন্যু ও প্রবাসী সমাজের প্রতি আহ্বান: সভ্য আলোচনার পক্ষে দৃঢ় থাকুন। কঠিন আলোচনার আয়োজন করুন, তবে নিশ্চিত করুন যে বক্তা, শ্রোতা এবং আইনসম্মত প্রতিবাদকারীর নিরাপত্তা বজায় থাকে। আওয়াজ বা সহিংসতায় কোনো আন্দোলনের শক্তি নির্ধারণ হয় না; বরং তার শৃঙ্খলা, মর্যাদা ও দায়িত্ববোধের ওপর নির্ভর করে।

লন্ডনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার অবস্থান পরিষ্কার করেছে এভাবে:
১. মেট্রোপলিটন পুলিশকে আহ্বান জানাচ্ছে, ঘটনার পূর্ণ তদন্ত সম্পন্ন করে, ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ভাঙচুর, হামলা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে।
২. রাজনৈতিক নেতা ও প্রবাসী সমাজের সংগঠকদের আহ্বান জানাচ্ছে, গোষ্ঠীগত আনুগত্য যাই থাকুক না কেন, সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রকাশ্য ও স্পষ্ট নিন্দা জানাতে।
৩. শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার এবং সমানভাবে সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের ভয় ছাড়া বক্তব্য ও সমাবেশের অধিকার পুনঃনিশ্চিত করছে।

বিবৃতির শেষে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র আবেগ দাবি করে; কিন্তু তা আত্মসংযমও দাবি করে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিকাশ, যা সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করে, তার জন্য উভয় কিছুরই প্রয়োজন।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় খবর

লন্ডনে উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর হামলা চেষ্টার নিন্দা অন্তর্বর্তী সরকারের

সময়ঃ ১২:০১:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় তার ওপর হামলা চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস। 

শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে সাড়ে ১১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়, যেখানে উপদেষ্টা মাহফুজের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসওএএস-ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে বাংলাদেশের জুলাই গণআন্দোলনের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি কর্মসূচি থেকে বের হওয়ার সময় উপদেষ্টা মাহফুজকে লক্ষ্য করে একদল বিক্ষোভকারী বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়িতে ডিম ছোড়ে এবং কিছু সময়ের জন্য গাড়ির পথরোধ করার চেষ্টা করে। লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে; প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আক্রমণের শিকার হওয়া গাড়িতে মাফজুল আলম ছিলেন না।

বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, এই ঘটনায় লন্ডন পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছে এবং উপদেষ্টার কর্মসূচিগুলোতে ‌পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে।

বিবৃতিতে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে, লন্ডনের এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে নিউ ইয়র্কে মাহফুজ আলমের ওপর হামলা হয়েছিল। সেখানে সরকারি কাজে অবস্থানকালে বাংলাদেশের কনসু্যলেট জেনারেলে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারীরা ডিম (এবং একাধিক সূত্র অনুযায়ী বোতলও) ছোড়ে ও কাচের দরজা ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, এমনকি স্টেট ডিপার্টমেন্টের স্থানীয় অফিসেও চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রকাশ্যে এই হামলার চেষ্টার নিন্দা জানান। সরকার এই সর্বশেষ হামলার নিন্দা জানাচ্ছে একই দৃঢ়তায়, যেভাবে নিউ ইয়র্কের ঘটনায় জানানো হয়েছিল। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের সরকার, বাংলাদেশের জনগণ এবং স্বাগতিক উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ সভ্যতার পাশে দাঁড়ায়, আর সন্ত্রাসীরা অবস্থান করে বর্বরতা ও দমননীতির অন্ধকার জগতে।

এই ধরনের আচরণের কোনো স্থান নেই গণতন্ত্রে, যেখানে তর্কের জায়গা সহিংসতার ওপরে, আর বিতর্কের জায়গা গুন্ডামির ওপর, বলা হয় বিবৃতিতে। 

এতে আরো বলা হয়, যেমনটি নিউ ইয়র্কের ঘটনার পর বলা হয়েছিল, সহিংসতা কোনো প্রতিবাদ নয়; ভয় দেখানো মুক্ত মতপ্রকাশ নয়। এই কথাগুলো লন্ডনের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য।

আমরা আবার সেই নীতি পুনর্ব্যক্ত করছি, যা নিউ ইয়র্কের ঘটনার পর জোর দিয়ে বলা হয়েছিল: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার গণতন্ত্রের মূলভিত্তি কিন্তু এগুলো দায়িত্ব ও সম্মানের সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে।

কনস্যুলেটের গাড়িকে লক্ষ্য করা বা তার গতিপথ আটকানোর চেষ্টা শুধু বেপরোয়া কাজই নয়, বরং এটি এমন সব আন্তর্জাতিক প্রথাকে আঘাত করে, যা জাতিগুলোর মধ্যে সংলাপকে সুরক্ষিত রাখে না। আমরা (লন্ডন) মেট্রোপলিটন পুলিশের পদক্ষেপকে স্বীকৃতি জানাই এবং দোষীদের শনাক্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে অব্যাহত সমন্বয়ের আহ্বান জানাই।

যারা এই আচরণ সংগঠিত করেছে বা এতে সহায়তা করেছে, তাদের প্রতি বার্তা: প্রাপ্তবয়স্ক হোন। যদি আপনারা নিজেদের দাবিতে বিশ্বাস করেন, তবে তা শান্তিপূর্ণ, আইনসঙ্গত ও মর্যাদাপূর্ণভাবে উপস্থাপন করুন। ডিম, মুষ্টি ও ভিড়ের প্রদর্শনী কাউকে বোঝাতে পারে না; এগুলো শুধু প্রমাণ করে আপনার আর কোনো যুক্তি অবশিষ্ট নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়, ভেন্যু ও প্রবাসী সমাজের প্রতি আহ্বান: সভ্য আলোচনার পক্ষে দৃঢ় থাকুন। কঠিন আলোচনার আয়োজন করুন, তবে নিশ্চিত করুন যে বক্তা, শ্রোতা এবং আইনসম্মত প্রতিবাদকারীর নিরাপত্তা বজায় থাকে। আওয়াজ বা সহিংসতায় কোনো আন্দোলনের শক্তি নির্ধারণ হয় না; বরং তার শৃঙ্খলা, মর্যাদা ও দায়িত্ববোধের ওপর নির্ভর করে।

লন্ডনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার অবস্থান পরিষ্কার করেছে এভাবে:
১. মেট্রোপলিটন পুলিশকে আহ্বান জানাচ্ছে, ঘটনার পূর্ণ তদন্ত সম্পন্ন করে, ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ভাঙচুর, হামলা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে।
২. রাজনৈতিক নেতা ও প্রবাসী সমাজের সংগঠকদের আহ্বান জানাচ্ছে, গোষ্ঠীগত আনুগত্য যাই থাকুক না কেন, সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রকাশ্য ও স্পষ্ট নিন্দা জানাতে।
৩. শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার এবং সমানভাবে সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের ভয় ছাড়া বক্তব্য ও সমাবেশের অধিকার পুনঃনিশ্চিত করছে।

বিবৃতির শেষে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র আবেগ দাবি করে; কিন্তু তা আত্মসংযমও দাবি করে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিকাশ, যা সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করে, তার জন্য উভয় কিছুরই প্রয়োজন।