০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোমাঞ্চকর ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

  • Sangbad365 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৬০১৮ Time View

রোমাঞ্চে মোড়া এক রাত। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলোয় ভাসছিল এশিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই। গ্যালারিতে উত্তেজনার ঢেউ, মাঠে ঝড় ওঠা আবেগ; সব মিলিয়ে যেন ক্রিকেট হয়ে উঠেছিল কাব্যেরই এক রূপ।

রবিবার দিবাগত রাতে ‘এশিয়া কাপ-২০২৫’ এর ফাইনাল মহারণে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ভারত ছিনিয়ে নিলো অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের মুকুট। মহাদেশীয় ক্রিকেটে এটা তাদের নবম শিরোপা, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দ্বিতীয়। ২০১৬’র পর আবারও টি-টোয়েন্টিতে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি উঠল ভারতীয়দের হাতে।

তবে কেবল ভারতের জয়গাথা নয়, ফাইনালটিকে মনে রাখার মতো করে তুলেছে পাকিস্তানের অপ্রাপ্তিও। ব্যাটিংয়ে তাদের শুরুটা ছিল স্বপ্নময়- ৯.৪ ওভারে বিনা উইকেটে ৮৪ রান, ১২.৪ ওভারে স্কোরবোর্ডে ১১৩/১। তখন প্রজেক্টেড স্কোর দেখাচ্ছিল ১৮০ থেকে ২০০। গ্যালারিতে পাকিস্তানি সমর্থকেরা বুনছিলেন শিরোপা উৎসবের স্বপ্ন। কিন্তু ক্রিকেট যে চিরদিনই অনিশ্চয়তার খেলা! এক সময় ঝড় থেমে গিয়ে সবুজ জার্সির দলটিকে গ্রাস করে দুর্ভাগ্য। ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়ে পাতা ঝরার মতো। অবিশ্বাস্যভাবে মাত্র ৩৩ রানের ব্যবধানে তারা হারায় ৯ উইকেট! ১১৩/১ থেকে ১৪৬ যেতে অলআউট তারা। রাতের আকাশে হতাশার নক্ষত্র হয়ে রইল পাকিস্তানের ইনিংস।

ভারতের স্পিন জাদুকরদের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ে সালমান-শাহীনদের দল। কুলদীপ যাদব যেন এক মায়াবি কবি। স্পেলের শেষ ওভারে মাত্র ১ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। ৩০ রানে মোট উইকেট নেন ৪টি। পাশে ছিল অক্ষর প্যাটেল (২/২৬), বরুণ চক্রবর্তী (২/৩০) ও বুমরাহর নিখুঁত আঘাত (২/২৫)। তাদের তোপে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়েছিল তাসের ঘরের মতো।

তবুও কিছু আলো ছড়িয়েছেন ফারহান (৫৭) আর ফখর জামান (৪৬)। সাইম আইয়ুব করেছিলেন ১৪ রান। কিন্তু বাকিদের স্কোর যেন ফোন নম্বরের মতো- ০৮১৬০০৬১!

লক্ষ্যটা বড় ছিল না, কিন্তু রান তাড়া করতে নেমে ভারতও টালমাটাল হয়ে পড়ে। ২০ রানেই সাজঘরে ফিরে যান অভিষেক শর্মা (৫), সূর্যকুমার যাদব (১) ও শুভমান গিল (১২)। হঠাৎই স্টেডিয়ামে নেমে আসে আশঙ্কার অন্ধকার। কিন্তু সেখানেই আলো জ্বালান তিলক ভার্মা, সঞ্জু স্যামসন ও শিভম দুবে।

১২ রানে জীবন পেয়ে সঞ্জু খেলেন ২৪ রানের শান্ত ইনিংস। দুবে খেলেন ৩৩ রানের ঝড়ো ক্যামিও। কিন্তু আসল কবিতাটা রচনা করেন তিলক ভার্মা, অপরাজিত ৬৯ রানের দীপ্ত ইনিংস খেলে। তার ব্যাট থেকে ঝরে পড়া চার-ছক্কা ছিল যেন রাত্রির আকাশে আতশবাজির ঝলকানি। তার ব্যাটে ভর করে শেষ পর্যন্ত ১৯.৪ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয় ছিনিয়ে নেয় ভারত।

পাকিস্তানের ফাহিম আশরাফ (৩/২৯) আর শাহীন আফ্রিদি (১/২০) লড়াই করেছেন প্রাণপণে। কিন্তু ভাগ্য লিখে রেখেছিল ভিন্ন কবিতা। হারিস রউফের দুই ওভারে ৩০ (১৭ ও ১৩) ভারত ঘুরে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত হারিসের ওভারেই জয় নিশ্চিত করে তারা।

এভাবেই আবারও ট্রফি উঠল ভারতের হাতে। গ্যালারিতে ভারতীয় সমর্থকেরা গেয়ে উঠল বিজয়ের গান। আর পাকিস্তান? তাদের জন্য থেকে গেল গভীর আক্ষেপ- ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু, বোলিংয়েও দারুণ সূচনা, তারপরও ট্রফি ছোঁয়া হলো না। ২০১২ সালের পর থেকে আর হয়নি শিরোপা জয়। এই অপেক্ষার প্রহর আরও দীর্ঘ হলো, ঠিক যেন মরুভূমির বুকে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষার মতো।

ট্যাগঃ

রোমাঞ্চকর ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

সময়ঃ ১২:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রোমাঞ্চে মোড়া এক রাত। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলোয় ভাসছিল এশিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই। গ্যালারিতে উত্তেজনার ঢেউ, মাঠে ঝড় ওঠা আবেগ; সব মিলিয়ে যেন ক্রিকেট হয়ে উঠেছিল কাব্যেরই এক রূপ।

রবিবার দিবাগত রাতে ‘এশিয়া কাপ-২০২৫’ এর ফাইনাল মহারণে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ভারত ছিনিয়ে নিলো অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের মুকুট। মহাদেশীয় ক্রিকেটে এটা তাদের নবম শিরোপা, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দ্বিতীয়। ২০১৬’র পর আবারও টি-টোয়েন্টিতে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি উঠল ভারতীয়দের হাতে।

তবে কেবল ভারতের জয়গাথা নয়, ফাইনালটিকে মনে রাখার মতো করে তুলেছে পাকিস্তানের অপ্রাপ্তিও। ব্যাটিংয়ে তাদের শুরুটা ছিল স্বপ্নময়- ৯.৪ ওভারে বিনা উইকেটে ৮৪ রান, ১২.৪ ওভারে স্কোরবোর্ডে ১১৩/১। তখন প্রজেক্টেড স্কোর দেখাচ্ছিল ১৮০ থেকে ২০০। গ্যালারিতে পাকিস্তানি সমর্থকেরা বুনছিলেন শিরোপা উৎসবের স্বপ্ন। কিন্তু ক্রিকেট যে চিরদিনই অনিশ্চয়তার খেলা! এক সময় ঝড় থেমে গিয়ে সবুজ জার্সির দলটিকে গ্রাস করে দুর্ভাগ্য। ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়ে পাতা ঝরার মতো। অবিশ্বাস্যভাবে মাত্র ৩৩ রানের ব্যবধানে তারা হারায় ৯ উইকেট! ১১৩/১ থেকে ১৪৬ যেতে অলআউট তারা। রাতের আকাশে হতাশার নক্ষত্র হয়ে রইল পাকিস্তানের ইনিংস।

ভারতের স্পিন জাদুকরদের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ে সালমান-শাহীনদের দল। কুলদীপ যাদব যেন এক মায়াবি কবি। স্পেলের শেষ ওভারে মাত্র ১ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। ৩০ রানে মোট উইকেট নেন ৪টি। পাশে ছিল অক্ষর প্যাটেল (২/২৬), বরুণ চক্রবর্তী (২/৩০) ও বুমরাহর নিখুঁত আঘাত (২/২৫)। তাদের তোপে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়েছিল তাসের ঘরের মতো।

তবুও কিছু আলো ছড়িয়েছেন ফারহান (৫৭) আর ফখর জামান (৪৬)। সাইম আইয়ুব করেছিলেন ১৪ রান। কিন্তু বাকিদের স্কোর যেন ফোন নম্বরের মতো- ০৮১৬০০৬১!

লক্ষ্যটা বড় ছিল না, কিন্তু রান তাড়া করতে নেমে ভারতও টালমাটাল হয়ে পড়ে। ২০ রানেই সাজঘরে ফিরে যান অভিষেক শর্মা (৫), সূর্যকুমার যাদব (১) ও শুভমান গিল (১২)। হঠাৎই স্টেডিয়ামে নেমে আসে আশঙ্কার অন্ধকার। কিন্তু সেখানেই আলো জ্বালান তিলক ভার্মা, সঞ্জু স্যামসন ও শিভম দুবে।

১২ রানে জীবন পেয়ে সঞ্জু খেলেন ২৪ রানের শান্ত ইনিংস। দুবে খেলেন ৩৩ রানের ঝড়ো ক্যামিও। কিন্তু আসল কবিতাটা রচনা করেন তিলক ভার্মা, অপরাজিত ৬৯ রানের দীপ্ত ইনিংস খেলে। তার ব্যাট থেকে ঝরে পড়া চার-ছক্কা ছিল যেন রাত্রির আকাশে আতশবাজির ঝলকানি। তার ব্যাটে ভর করে শেষ পর্যন্ত ১৯.৪ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয় ছিনিয়ে নেয় ভারত।

পাকিস্তানের ফাহিম আশরাফ (৩/২৯) আর শাহীন আফ্রিদি (১/২০) লড়াই করেছেন প্রাণপণে। কিন্তু ভাগ্য লিখে রেখেছিল ভিন্ন কবিতা। হারিস রউফের দুই ওভারে ৩০ (১৭ ও ১৩) ভারত ঘুরে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত হারিসের ওভারেই জয় নিশ্চিত করে তারা।

এভাবেই আবারও ট্রফি উঠল ভারতের হাতে। গ্যালারিতে ভারতীয় সমর্থকেরা গেয়ে উঠল বিজয়ের গান। আর পাকিস্তান? তাদের জন্য থেকে গেল গভীর আক্ষেপ- ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু, বোলিংয়েও দারুণ সূচনা, তারপরও ট্রফি ছোঁয়া হলো না। ২০১২ সালের পর থেকে আর হয়নি শিরোপা জয়। এই অপেক্ষার প্রহর আরও দীর্ঘ হলো, ঠিক যেন মরুভূমির বুকে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষার মতো।