সিরিজ হারের পর হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াইয়ে স্রেফ উড়ে গেল বাংলাদেশ। আফগানিস্তান হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়ের পর প্রথমবার বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করলো। প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ কোনো লড়াই করতে পারেনি। শেষটাতে মুখ রক্ষাও হয়নি। অস্তিত্ব রক্ষার ম্যাচে উল্টো চরম নাকানিচুবানি খাওয়া লাগল মিরাজ অ্যান্ড কোং-কে।
আফগানিস্তান জয় পেয়েছে ২০০ রানের বিশাল ব্যবধানে। যা ওয়ানডেতে তাদের রানের ব্যবধান হিসেবে দ্বিতীয় বড় হয়। দুইশ বা তার বেশি রানের হিসেবে এটিই তাদের দ্বিতীয় জয়। এর আগে তারা ২৩২ রানে হারিয়েছিল জিম্বাবুয়েকে।
আবুধাবিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানিস্তান ৯ উইকেটে ২৯৩ রান করে। জবাব দিতে নেমে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে মাত্র ৯৩ রানে অল আউট বাংলাদেশ।
ওয়ানডেতে ১৬তম বারের মতো ১০০ রানের নিচে অলআউট হলো বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের এবারই প্রথম দলগতভাবে তিন অঙ্ক ছুঁতে পারল না বাংলাদেশ। সে বছরের জানুয়ারিতে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার কাছে ৮২ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ সঙ্গী করেছে আরেকটি হার। যদিও আজ বোলিংও ভালো হয়নি অতিথিদের। দুই বিভাগেই চরম বাজে ক্রিকেট খেলে বিশাল পরাজয়কে সঙ্গী করেছে দল।
এই হার, এই ব্যর্থতার কারণ একটাই, নিজেদের নিবেদনে প্রবল ঘাটতি। মাঠের ২২ গজে লড়াইয়ের আগেই যেভাবে ব্যাটসম্যানরা আত্মাহুতি দেন তা রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝতে না পারা, উইকেটের মূল্য দিতে না পারা, দায়বদ্ধতার জায়গা পুরোপুরি ফাঁকা…ঘুরে ফিরে এগুলোই চোখে পড়ছে বেশি।
বলা হয়, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে আপ্রাণ লড়াইয়ের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। ঝড়ে পথ হারানোর নাবিকও তীরে পৌঁছতে লড়াই চালিয়ে যান বাঁচার সামান্যতম আশাতেই। অথচ হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশনে বাংলাদেশের অবস্থা ছিল পুরোপুরি উল্টো।
লড়াই তো দূরের কথা, ম্যাচটা শেষ হলেই ‘বাঁচি’ মনোভাবটাই ছিল এরকম। অথচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যবধান একটা সময় ছিল কতটাই না ওপরে।
দুই দল এখন পর্যন্ত ২২ ম্যাচ খেলেছে। এই সিরিজের আগে বাংলাদেশের জয় ছিল ১১টি। আফগানদের ৮টি। এই সিরিজের পর দুই দলের অবস্থান এখন সমান-সমান।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরতে এটা পরিসংখ্যান যথেষ্ট হতে পারে, দলের ওপেনার সাইফ হাসানের রান ৪৩। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ৯, হাসান মাহমুদের। যার মূল কাজ বোলিং। বাকিরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। একটা দলের একজন ব্যাটসম্যানই কেবল দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছিলেন। বাকিরা কেবলই নিরব দর্শক।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের জন্য ‘ঘাতক’ হয়ে এসেছিলেন পেসার বিলাল সামি। দলে ফিরে ডানহাতি পেয়েছেন ৫ উইকেট। আর বাংলাদেশের ভয়ের নাম, রশিদ খান পেয়েছেন ৬ ওভারে ১২ রানে ৩ উইকেট। নিজের গুগলিতে তাওহীদ, সাইফ ও সোহানকে পরাস্ত করেছেন তিনি। সিরিজে ১১ উইকেট নিয়েছেন। নিজের আগের তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ ৯ উইকেটের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছেন।
বিলাল সামি এমন কোনো বোলিং করেননি যে, ফাইফার তাকে পেতেই হবে। ব্যাটসম্যানরা নিজেদের উইকেট বিলিয়ে আসাতেই ম্যাচ জয়ের নায়ক তিনি।
এই সিরিজের নায়ক আফগান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান। তিন ম্যাচেই রান করেছেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন।আশ্চর্যজনক ভাবে আজও ৯৫ রানে রান আউট হন তিনি। ২১৩ রান করে সিরিজ সেরা হয়েছেন।
তবে বাংলাদেশের লক্ষ্য এতোটা বড় হতো কিনা সেটা প্রশ্নের। আফগানিস্তানের উড়ন্ত শুরু থামিয়ে দেওয়ার পর যেভাবে বোলাররা লড়াইয়ে ফিরেছিলেন তা প্রশংসার প্রাপ্য। কিন্তু শেষে আবার তারাই ডুবিয়েছেন। বিশেষ করে শেষ ২ ওভারেই ম্যাচের এপিটাফ লিখে দিয়েছিলেন তারা। ৪৯তম ওভারে আসে ২৫ রান, ৫০তম ওভারে ১৯ রান।
ইব্রাহিম জাদরান শুরুতেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান। নাঈম শেখ তার ক্যাচ নিতে পারেননি। বৃত্তের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইব্রাহিম ও রহমানউল্লাহ শুরুর ১০ ওভারে ৬৬ রান তুলে নেন। ৯৯ রান পর্যন্ত টিকে তাদের জুটি।
উইকেটের খোঁজে থাকা বাংলাদেশকে কিছুটা আশা দেখান তানভীর। এরপর ইব্রাহিম ও অতল ৭৪ রানের জুটি গড়েন। সেখান থেকে সাইফের আচমকা আক্রমণে আফগানিস্তানের ব্যাটিংয়ে ধস নামে। ২ উইকেটে ১৭৩ রান থেকে ৭ উইকেটে ২২১ রান হয় চোখের পলকেই। যার ৩টি উইকেট পান সাইফ।
কিন্তু শেষে আবার করুণ দশা। নাহিদ রানা নিজের ওভার শেষ করতে পারেননি। অধিনায়ক মিরাজ ৪৯তম ওভার করতে এসে ২২ রান বিলিয়ে আসেন। আক্রমণাত্মক খেলা মোহাম্মদ নবী ৩৭ বলে ৬২ রান করেন। যার ৪১ রানই করেন শেষ ১০ বলে।
আবু ধাবিতে ২৫০ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে মাত্র ছয়টি। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের যেই করুণ দশা, ব্যর্থতার মোড়কে তারা যেভাবে বন্দী…আজকে বাজি ধরার মতো কেউ ছিল বলে মনে হয় না।
নিজেদের মোড়ানো মোড়কেই তারা আটকে থাকলেন। ৯৩ রানে গুটিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, নিজেদের অতীতের গৌরব এখন কেবলই বোঝা!
অন্যদিকে আফগানিস্তান উড়ছে। টানা পাঁচ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিল। টি-টোয়েন্টি সিরিজের বদলা ওয়ানডেতে নিল তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: আফগানিস্তান: ২৯৩/৯, বাংলাদেশ: ৯৩/১০
ফল: আফগানিস্তান ২০০ রানে জয়ী
সিরিজ: আফগানিস্তান ৩ : ০ বাংলাদেশ
Sangbad365 Admin 














