০১:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভাঙারির দোকানি জানতেন না, কী অমূল্য জিনিস তুলে দিলেন আমার হাতে

  • Sangbad365 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৬:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৬০১২ Time View

কিশোর পাশাকে প্রথম পেয়েছিলাম পুরোনো মালামাল দিয়ে নতুন মালামাল নেওয়ার ভ্রাম্যমাণ দোকানে। তখন গ্রামে থাকি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। সামনে বৃত্তি পরীক্ষা। দারুণ চাপ পড়ার। সব সময় মা-বাবা, পরিবারের সবাই ‘পড়তে’ বলেন। সকাল-বিকেল স্যার আসেন পড়াতে।

মডেল টেস্ট দিতে কোচিংয়েও যেতে হয়। আর সারাক্ষণ ‘বৃত্তি পাওয়ার বই’ পড়তে এত কার ভালো লাগে! অন্তত আমার মতো ‘পড়াচোর’দের তো ভালো লাগে না। তাই সুযোগ পেলেই ক্লাসের বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ি।

এর মধ্যে একদিন পুরোনো মালামালের; বরং বলা ভালো ভ্রাম্যমাণ ভাঙারির দোকানি আসার শব্দ পেয়ে গেলাম দৌড়ে। ভাঙারির দোকানিরা বোতল ছিদ্র করে বোতলের সঙ্গে একটা মার্বেল বেঁধে বাজাতে বাজাতে আসতেন। খটখট ধরনের একটা শব্দ হতো।

বলা দরকার, পুরোনো মালামালের দোকান হলেও পুরোনো বই-খাতা-কাগজও কিনতেন তাঁরা। যদিও বলেছি দৌড়ে গেলাম, কিন্তু এই দৌড়ে যাওয়ার কারণ ‘কিশোর পাশা’ ছিল না। কারণ ছিল ‘বুটভাজা’। খেতে বেশ মজা।

দুই টাকায় অনেকগুলো পাওয়া যেত। সেদিন বুটভাজা কেনার উদ্দেশ্যে গেলেও হঠাৎ পুরোনো বই-খাতা রাখা চাঙাড়ির ওপর চোখ চলে যায়। পুরোনো, ময়লা লাগা একটা বই। বইয়ের পেছনে লেখা, ‘হ্যাল্লো কিশোর বন্ধুরা—আমি কিশোর পাশা বলছি আমেরিকার রকি বিচ থেকে…’

তখনো গোয়েন্দা কাহিনির সঙ্গে পরিচয় হয়নি। তাই কিছুটা উৎসাহের সঙ্গেই পকেটে থাকা বুটভাজা কেনার দুই টাকা বের করে দোকানি কাকুকে বলি, ‘কাকু, এই বইটা নিই।’
‘টাকা লাগবে না, নিয়ে নে,’ এমন কিছুই সম্ভবত বলেছিলেন দোকানি কাকু। তাঁর কাছে পুরোনো বইটার হয়তো অর্থনৈতিক মূল্য ছাড়া আর কোনো মূল্য ছিল না।

কিংবা কাকু এ–ও জানতেন না, সেদিন তিনি আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন গোয়েন্দা হওয়ার স্বপ্ন। পুরোদস্তুর পাঠক হয়ে ওঠার রসদ। বাড়ি ফিরে বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে এক রাতে বইটা পড়েছিলাম। পরদিন কোচিংয়ে মডেল টেস্টে নম্বরও কম পেয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে বকাও খেয়েছিলাম অনেক। তারপর একে একে রকিব হাসানের সঙ্গে পরিচয়। ‘তিন গোয়েন্দা’র পাঠক হয়ে ওঠা।

ট্যাগঃ

ভাঙারির দোকানি জানতেন না, কী অমূল্য জিনিস তুলে দিলেন আমার হাতে

সময়ঃ ১২:০৬:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

কিশোর পাশাকে প্রথম পেয়েছিলাম পুরোনো মালামাল দিয়ে নতুন মালামাল নেওয়ার ভ্রাম্যমাণ দোকানে। তখন গ্রামে থাকি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। সামনে বৃত্তি পরীক্ষা। দারুণ চাপ পড়ার। সব সময় মা-বাবা, পরিবারের সবাই ‘পড়তে’ বলেন। সকাল-বিকেল স্যার আসেন পড়াতে।

মডেল টেস্ট দিতে কোচিংয়েও যেতে হয়। আর সারাক্ষণ ‘বৃত্তি পাওয়ার বই’ পড়তে এত কার ভালো লাগে! অন্তত আমার মতো ‘পড়াচোর’দের তো ভালো লাগে না। তাই সুযোগ পেলেই ক্লাসের বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ি।

এর মধ্যে একদিন পুরোনো মালামালের; বরং বলা ভালো ভ্রাম্যমাণ ভাঙারির দোকানি আসার শব্দ পেয়ে গেলাম দৌড়ে। ভাঙারির দোকানিরা বোতল ছিদ্র করে বোতলের সঙ্গে একটা মার্বেল বেঁধে বাজাতে বাজাতে আসতেন। খটখট ধরনের একটা শব্দ হতো।

বলা দরকার, পুরোনো মালামালের দোকান হলেও পুরোনো বই-খাতা-কাগজও কিনতেন তাঁরা। যদিও বলেছি দৌড়ে গেলাম, কিন্তু এই দৌড়ে যাওয়ার কারণ ‘কিশোর পাশা’ ছিল না। কারণ ছিল ‘বুটভাজা’। খেতে বেশ মজা।

দুই টাকায় অনেকগুলো পাওয়া যেত। সেদিন বুটভাজা কেনার উদ্দেশ্যে গেলেও হঠাৎ পুরোনো বই-খাতা রাখা চাঙাড়ির ওপর চোখ চলে যায়। পুরোনো, ময়লা লাগা একটা বই। বইয়ের পেছনে লেখা, ‘হ্যাল্লো কিশোর বন্ধুরা—আমি কিশোর পাশা বলছি আমেরিকার রকি বিচ থেকে…’

তখনো গোয়েন্দা কাহিনির সঙ্গে পরিচয় হয়নি। তাই কিছুটা উৎসাহের সঙ্গেই পকেটে থাকা বুটভাজা কেনার দুই টাকা বের করে দোকানি কাকুকে বলি, ‘কাকু, এই বইটা নিই।’
‘টাকা লাগবে না, নিয়ে নে,’ এমন কিছুই সম্ভবত বলেছিলেন দোকানি কাকু। তাঁর কাছে পুরোনো বইটার হয়তো অর্থনৈতিক মূল্য ছাড়া আর কোনো মূল্য ছিল না।

কিংবা কাকু এ–ও জানতেন না, সেদিন তিনি আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন গোয়েন্দা হওয়ার স্বপ্ন। পুরোদস্তুর পাঠক হয়ে ওঠার রসদ। বাড়ি ফিরে বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে এক রাতে বইটা পড়েছিলাম। পরদিন কোচিংয়ে মডেল টেস্টে নম্বরও কম পেয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে বকাও খেয়েছিলাম অনেক। তারপর একে একে রকিব হাসানের সঙ্গে পরিচয়। ‘তিন গোয়েন্দা’র পাঠক হয়ে ওঠা।