পদ্মা নদীর ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে ভবনটি সরিয়ে নেওয়ার কাজ। ফলে এলাকার নগারিকসেবা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভবন থেকে পদ্মা নদী আর মাত্র কয়েক মিটার দূরে। তাই স্থানান্তর করা হচ্ছে। নাগরিক সেবা নিশ্চিতে অঙ্গিকার করছেন তারা।
এলাকাবাসী জানান, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে জুন মাসের শেষের দিকে ভাঙন শুরু হয়। এরপরই ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ে নারয়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভবন। ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা ভবনটি স্থানান্তরের আবদেন করেন। ভাঙন আরো তীব্র হলে জেলা প্রশাসক পরিষদটির ভবন জরুরি ভিত্তিতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে ভবন স্থানান্তরের কাজ। পরিষদের মালামাল স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে রাখা হচ্ছে।
নারায়াণপুরে বাসিন্দা জিয়াউর রহমান সোমবার (২৮ জুলাই) বলেন, “গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার পদ্মার ভাঙন খুবই তীব্র। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ মানুষের বিঘার-বিঘা আবাদি জমি বিলিন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এ কারণে নাগরিক সেবা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।”
নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আনোয়ার হোসেন বলেন, “নাগরিক সেবা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়নি। প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি। আমাদের নির্দিষ্ট একটি জায়গা হলে আবারো নাগরিকসেবার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে।”
নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, “নারায়ণপুরের প্রায় ৪ কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন চলছে। ইউনিয়ন পরিষদের ভবন থেকে আর মাত্র কয়েক মিটার দূরে পদ্মা নদীর অবস্থান। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্মতাদের নির্দেশনা পেয়ে পরিষদের ভবন স্থানান্তরের কাজ চলমান রয়েছে।”
নাগরিক সেবা স্থবির হয়ে পড়েছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নাগরিক সেবা থেমে নেই। একটা অফিস ভাঙলে কিছুতো ঘাটতি থাকবেই।”
২৫ কিলোমিটার জুড়ে আতঙ্ক:
পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি ও হ্রাস পেলে ভাঙন দেখা দেয়। এবার উজানের ঢল আর অতিবৃষ্টির কারণে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার মনোহরপুর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটারজুড়ে ভাঙনের মুখে রয়েছে। নদী ভাঙন আতঙ্কে পদ্মার তীরবর্তী বাসিন্দারা ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন।
পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা জানান, ভাঙনে বিলিন হয়েছে বোদ্দনাথপুর, ফিল্টেরহাট, দোভাগী এবং বাদশাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিবগঞ্জ উপজেলার দুলর্ভপুর ইউনিয়নের ফিল্টেরহাট কমিউনিটি ক্লিনিক, চর জগনাথপুর মহিলা গার্লস স্কুলসহ অনেক স্থাপনা ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার বাদশাপাড়ার বাসিন্দা সাখাওয়াত বলেন, “নদী ভাঙন আতঙ্কে পদ্মার তীর থেকে সবাই সরে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, তারা এখন থাকবে কোথায়?”
তিনি বলেন, “বছরের পর বছর এমন চলতে থাকায় আমাদের ভিটামাটি-আবাদি জমি সব শেষ। সরকারের কাছে আবেদন, স্থায়ী বাঁধ দিয়ে আমাদের শেষ সম্বলটুকু যেন তারা রক্ষা করেন।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর বাতাসমোড়, পাকার ঘাট, মনোহরপুর, ঝাইলপাড়া, মল্লিকপাড়া, পোলাডাঙ্গা বিওপি এসব এলাকার ডান তীর-বাঁ তীর মিলে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এখন ভাঙনের মুখে। জরুরি ভিত্তিতে পোলাডাঙ্গা বিওপি ও মনোহরপুর এলাকায় জিও ব্যাগ ও জিও টিউব দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীর তীর রক্ষা নামে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২৬ কিলোমিটাজুড়ে বাঁধ ও প্রায় ৪ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চর অপসারণ করা হবে।”