ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যবধান দূরীকরণ’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতের সম্ভাবনা ব্যাপক হলেও নীতি সহায়তার অভাব, আস্থাহীনতা, দুর্বল অবকাঠামো এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে এ খাত পূর্ণাঙ্গভাবে বিকশিত হতে পারছে না।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মো. এজাজুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ।
ডিসিসিআই সভাপতির বক্তব্য
স্বাগত বক্তব্যে তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘‘দেশে ২০১১ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালুর পর বর্তমানে প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ এ সেবা ব্যবহার করছে। তবে সাইবার নিরাপত্তা, ভোক্তাদের অধিকার রক্ষা ও আস্থার ঘাটতির কারণে এ খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি।’’ তিনি বলেন, “ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে আস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
সরকারের অবস্থান
ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকার, বেসরকারি খাত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে ডিজিটাল-সেবা সম্প্রসারণে কাজ করছে।’’ তিনি জানান, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় সরকার দ্রুত ডাটা প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন করছে। সচিব আরও জানান, দেশে ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে নাগরিকসেবা প্রদান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকায় ১০টি নাগরিক সেবা চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গি
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ডা. এজাজুল ইসলাম জানান, আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মানি সার্কুলেশন হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকের বাইরে সাধারণ মানুষের হাতে রয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, “এখনও দেশের মোট লেনদেনের মাত্র ২৭ থেকে ২৮ শতাংশ ডিজিটাল মাধ্যমে হচ্ছে, বাকি ৭০ শতাংশ প্রথাগত পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধ।”
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা
রবি আজিয়াটা পিএলসি’র হেড অব কমার্শিয়াল পার্টনারশিপ সানজিদ হাসান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘‘এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ২০২৫ সালে ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতের বাজার ৪৬৭৮.৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও ২০৩৩ সালে তা ১১২৩৮.৬ মিলিয়নে পৌঁছাবে।’’ তিনি নিরাপদ লেনদেনের জন্য সমন্বিত সাইবার সিকিউরিটি ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
আলোচনায় অন্যান্য বক্তা
ডিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি) মো. ইলিয়াস জিকো বলেন, ‘‘প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ কোটি টাকার ডিজিটাল জালিয়াতি ঘটছে। গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে ডিজিটাল ব্যাংকিং ঝুঁকির মুখে পড়বে।’’
শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন, “দেশে ৬৪টি ব্যাংক থাকলেও কার্যকর ডিজিটাল ব্যাংক চালুর রোডম্যাপ নেই।”
সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আজিজুর রহমান জানান, দেশের ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ এখনও ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে।
ওমেগা এক্সিম লিমিটেডের পরিচালক রেজওয়ান আলী বলেন, ‘‘রফতানি-আমদানি কার্যক্রমে ব্লকচেইন প্রযুক্তি যুক্ত করা হলে স্বচ্ছতা বাড়বে।’’
বেটলস্ সাইবার সিকিউরিটি লিমিটেডের চিফ সাইবার অফিসার শাহী মির্জা এজেন্ট ব্যাংকিং কম্পিউটারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ইউনিফাইড সাইবার সিকিউরিটি ফ্রেমওয়ার্ক গঠনের প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Sangbad365 Admin 













