০৩:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেননি রাজসাক্ষী মামুন, দাবি শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর

  • Sangbad365 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৭:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৬০১৬ Time View

বৈষম‍্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হননি, তাকে প্ররোচিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

সোমবার (৬ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ শেখ হাসিনার মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে জেরার সময় এমন দাবি করেন তিনি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ৫৪তম বা সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন এই তদন্ত কর্মকর্তা।

সাক্ষীর উদ্দেশে আমির হোসেন বলেন, আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাননি। বরং আমার মক্কেল শেখ হাসিনা ও কামালকে ফাঁসাতে আপনি ও তদন্ত সংস্থার অন্য সদস্যদের প্ররোচনায় তিনি এ কাজটি করেছিলেন।

জবাবে এসব সত্য নয় বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর। তিনি বলেন, নিজের ইচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আমি বা তদন্ত সংস্থার অন্যান্য সদস্য কোনও ধরনের প্ররোচনা দেইনি।

শেখ হাসিনার এই আইনজীবীর ভাষ্যমতে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বহু সংখ্যক মানুষ নিহত-আহত হয়েছেন। কিন্তু জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে গুটিকয়েক ভুক্তভোগী পরিবারের।

এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ১৫০০ জন নিহত ও ২৫ হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। তাদের সব পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। তবে অনেকের সঙ্গে বলেছি। এর মধ্যে শহীদ পরিবারের ১০ জন এবং আহত পরিবারের ২২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।

একপর্যায়ে এ মামলায় দাখিলকৃত জব্দ তালিকার তথ্যগুলো অসত্য বলে দাবি করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন। জবাবে এটাও সত্য নয় বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

এছাড়া, ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় অসত্য প্রতিবেদন ছাপানো হয়েছে অভিযোগ তুলে সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন এই আইনজীবী। কেননা, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করেছেন মাহমুদুর রহমান। এজন্য শত্রুতাবশত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনি এ কাজ করেছেন। একইসঙ্গে ২০ ও ২১ এপ্রিল জব্দকৃত মোট ১৯টি ভিডিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) তৈরি বলেও দাবি করেন তিনি।

জবাবে এসব সত্য নয় বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। তিনি বলেন, এসব ভিডিও এআই জেনারেটেড ছিল না।

এদিন বেলা পৌনে ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ জেরা চলে। মাঝে কিছুক্ষণ বিরতি দেওয়া হয়। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল। ফলে তার অবশিষ্ট জেরা আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, তানভীর হাসান জোহা, ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, মঈনুল করিমসহ অন্যরা।

গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

ওইদিন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠনের সময় মামুন এসব কথা বলেন।

একইদিন এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।

এ মামলায় তিন জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।

ট্যাগঃ

স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেননি রাজসাক্ষী মামুন, দাবি শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর

সময়ঃ ১২:০৭:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

বৈষম‍্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হননি, তাকে প্ররোচিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

সোমবার (৬ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ শেখ হাসিনার মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে জেরার সময় এমন দাবি করেন তিনি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ৫৪তম বা সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন এই তদন্ত কর্মকর্তা।

সাক্ষীর উদ্দেশে আমির হোসেন বলেন, আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাননি। বরং আমার মক্কেল শেখ হাসিনা ও কামালকে ফাঁসাতে আপনি ও তদন্ত সংস্থার অন্য সদস্যদের প্ররোচনায় তিনি এ কাজটি করেছিলেন।

জবাবে এসব সত্য নয় বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর। তিনি বলেন, নিজের ইচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আমি বা তদন্ত সংস্থার অন্যান্য সদস্য কোনও ধরনের প্ররোচনা দেইনি।

শেখ হাসিনার এই আইনজীবীর ভাষ্যমতে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বহু সংখ্যক মানুষ নিহত-আহত হয়েছেন। কিন্তু জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে গুটিকয়েক ভুক্তভোগী পরিবারের।

এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ১৫০০ জন নিহত ও ২৫ হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। তাদের সব পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। তবে অনেকের সঙ্গে বলেছি। এর মধ্যে শহীদ পরিবারের ১০ জন এবং আহত পরিবারের ২২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।

একপর্যায়ে এ মামলায় দাখিলকৃত জব্দ তালিকার তথ্যগুলো অসত্য বলে দাবি করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন। জবাবে এটাও সত্য নয় বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

এছাড়া, ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় অসত্য প্রতিবেদন ছাপানো হয়েছে অভিযোগ তুলে সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন এই আইনজীবী। কেননা, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করেছেন মাহমুদুর রহমান। এজন্য শত্রুতাবশত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনি এ কাজ করেছেন। একইসঙ্গে ২০ ও ২১ এপ্রিল জব্দকৃত মোট ১৯টি ভিডিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) তৈরি বলেও দাবি করেন তিনি।

জবাবে এসব সত্য নয় বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। তিনি বলেন, এসব ভিডিও এআই জেনারেটেড ছিল না।

এদিন বেলা পৌনে ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ জেরা চলে। মাঝে কিছুক্ষণ বিরতি দেওয়া হয়। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল। ফলে তার অবশিষ্ট জেরা আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, তানভীর হাসান জোহা, ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, মঈনুল করিমসহ অন্যরা।

গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

ওইদিন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠনের সময় মামুন এসব কথা বলেন।

একইদিন এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।

এ মামলায় তিন জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।