বেলুচিস্তানে ঔপনিবেশিক আমলের স্যান্ডেমান ফোর্টকে বন্দিশিবিরে রূপান্তর করা হয়, যেখানে প্রায় ১০ হাজার বাঙালি আটক ছিলেন। অসমাপ্ত ভবনের ঘিঞ্জি কক্ষে বন্দীদের রাখা হতো এবং ভবনের নির্মাণকাজও অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের দিয়েই করানো হতো। পরিবারগুলোকে একটি ছোট ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হতো, যেখানে দেয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হতো ছেঁড়া কম্বল।
শাগাই ফোর্টের মতো এখানেও বন্দীদের সামরিক বা প্রশাসনিক পদমর্যাদা অনুযায়ী ভাগ করা হতো এবং সেই অনুযায়ী তাঁরা খাবার, চিকিৎসা ও ন্যূনতম সুবিধা পেতেন। কর্মকর্তারা সামান্য চিকিৎসা পেলেও নিম্নপদস্থ সেনা ও বেসামরিক বন্দীরা কোনো চিকিৎসাসেবাই পেতেন না। সিপাই সালাহাদত–উল্লাহ বন্দিত্বকালে একটি কৃত্রিম পা পেয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাঁর কাছ থেকে ৪০০ রুপি আদায় করে। বন্দীদের প্রতিনিয়ত সহিংসতার হুমকির মধ্যে রাখতে হতো। পালানোর চেষ্টা করলে শাস্তি ছিল নির্মম প্রহার। ধরা পড়া বন্দীদের জামরুদ ফোর্ট, খাজুরি ফোর্ট (বেলুচিস্তান) এবং লায়লপুর জেলসহ (পাঞ্জাব) অন্যান্য ক্যাম্পে পাঠানো হতো, যেখানে তাদের একাকী সেলে বন্দী রাখা হতো।
কেউ মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে তাকে ‘পাগল’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হতো। পরিহাস হলো, এই ‘পাগল’ সেনাদেরই ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান প্রথমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় ‘সদিচ্ছার বার্তা’ হিসেবে।
বন্দিশিবিরের কাঁটাতারের ভেতরও কিছু বন্দী নিজেদের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। স্যান্ডেমান ফোর্টে মা–বাবারা একত্র হয়ে শিশুদের জন্য অস্থায়ী স্কুল তৈরি করেছিলেন, যাতে তারা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত না হয়।
Sangbad365 Admin 




