০১:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রেসকোর্সের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ

  • Sangbad365 Admin
  • সময়ঃ ১২:০০:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১৬০১৬ Time View

পৌষের বিকেল। কুহেলিকার নরম আলো এসে পড়ছে রেসকোর্সের মাঠে। একটু পর এখানে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বাংলার ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। রেসকোর্সের বিশাল মাঠে একটি কাঠের টেবিল ও দুটি চেয়ার পাতা। একটিতে বসেছেন মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। আরেকটিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তাঁর চোখেমুখে সন্ত্রস্ত ভাব। হৃষ্টপুষ্ট নিয়াজিকে দেখাচ্ছে চুপসানো বেলুনের মতো। এই দুই জেনারেলের পেছনে দণ্ডায়মান মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার, ভারতীয় ভাইস অ্যাডমিরাল নীলকান্ত কৃষ্ণান, এয়ার মার্শাল হরি চাঁদ দেওয়ান, কোর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাগাত সিং ও পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জে এফ আর জেকব। কাঁপা কাঁপা হাতে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করছেন নিয়াজি। সেদিকে নজর রাখছেন জেনারেল অরোরা। এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বুকে ‘বাংলাদেশ’ নামে যে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হলো, ফ্ল্যাশগানের আলোয় সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি ক্লিক ক্লিক করে উঠল বেশ কয়েকজন আলোকচিত্রীর ক্যামেরায়।

ওই দিন যাঁরা ছবি তুলেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ফটোসাংবাদিক। সেদিন ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যানের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী রঘু রাই ও দ্য এশিয়া ম্যাগাজিনের ফটো এডিটর কিশোর পারেখসহ বিশ্বের বাঘা বাঘা আলোকচিত্রী ছবি তুলেছেন একেবারে সামনের কাতারে থেকে। ব্যতিক্রম ছিল বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের বেলায়। সেদিন একেবারে নিজেদের প্রচেষ্টায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করে ছবি তুলেছিলেন বাংলাদেশের চার আলোকচিত্রী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই দিন রেসকোর্সের মাঠে হাজির হয়েছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমদ, দৈনিক পূর্বদেশের মানু মুন্সী, ডিএফপির চিত্রগ্রাহক এম এ মবিন ও প্রখ্যাত আলোকচিত্রী আমানুল হক। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি তুলতে পারার জন্য আফতাব আহমদ কিছুটা স্বীকৃতি পেলেও বাকি তিন আলোকচিত্রীর নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ নেই। ফলে তাঁদের সাহসিকতার কথা দীর্ঘ সময় ধরে আড়ালেই থেকে গেছে।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় খবর

টিভিতে আজকের খেলা (২২ ডিসেম্বর, ২০২৫)

রেসকোর্সের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ

সময়ঃ ১২:০০:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

পৌষের বিকেল। কুহেলিকার নরম আলো এসে পড়ছে রেসকোর্সের মাঠে। একটু পর এখানে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বাংলার ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। রেসকোর্সের বিশাল মাঠে একটি কাঠের টেবিল ও দুটি চেয়ার পাতা। একটিতে বসেছেন মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। আরেকটিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তাঁর চোখেমুখে সন্ত্রস্ত ভাব। হৃষ্টপুষ্ট নিয়াজিকে দেখাচ্ছে চুপসানো বেলুনের মতো। এই দুই জেনারেলের পেছনে দণ্ডায়মান মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার, ভারতীয় ভাইস অ্যাডমিরাল নীলকান্ত কৃষ্ণান, এয়ার মার্শাল হরি চাঁদ দেওয়ান, কোর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাগাত সিং ও পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জে এফ আর জেকব। কাঁপা কাঁপা হাতে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করছেন নিয়াজি। সেদিকে নজর রাখছেন জেনারেল অরোরা। এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বুকে ‘বাংলাদেশ’ নামে যে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হলো, ফ্ল্যাশগানের আলোয় সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি ক্লিক ক্লিক করে উঠল বেশ কয়েকজন আলোকচিত্রীর ক্যামেরায়।

ওই দিন যাঁরা ছবি তুলেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ফটোসাংবাদিক। সেদিন ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যানের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী রঘু রাই ও দ্য এশিয়া ম্যাগাজিনের ফটো এডিটর কিশোর পারেখসহ বিশ্বের বাঘা বাঘা আলোকচিত্রী ছবি তুলেছেন একেবারে সামনের কাতারে থেকে। ব্যতিক্রম ছিল বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের বেলায়। সেদিন একেবারে নিজেদের প্রচেষ্টায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করে ছবি তুলেছিলেন বাংলাদেশের চার আলোকচিত্রী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই দিন রেসকোর্সের মাঠে হাজির হয়েছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমদ, দৈনিক পূর্বদেশের মানু মুন্সী, ডিএফপির চিত্রগ্রাহক এম এ মবিন ও প্রখ্যাত আলোকচিত্রী আমানুল হক। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি তুলতে পারার জন্য আফতাব আহমদ কিছুটা স্বীকৃতি পেলেও বাকি তিন আলোকচিত্রীর নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ নেই। ফলে তাঁদের সাহসিকতার কথা দীর্ঘ সময় ধরে আড়ালেই থেকে গেছে।