ইতিহাসে পর্তুগিজরা বলত ‘কার্তাজ’ (টোকেন) ছাড়া জাহাজ চলবে না। আজকের বনদস্যুরা বলছে ‘কার্ড’ ছাড়া বনে ঢোকা যাবে না। আর রাজনীতিবিদেরা প্রতিনিয়ত ঘোষণা করেন, ‘আমাদের ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।’ অর্থাৎ বাক্য আলাদা হলেও উদ্দেশ্য এক—দুর্বল জনগণকে বন্দী করে রাখা।
এই শোষণ কৌশলকে টিকিয়ে রাখে আরেকটি ত্রিভুজ। পর্তুগিজদের পাশে ছিল বন্দরের এজেন্টরা, যারা জাহাজ থেকে কর আদায় করত। বনদস্যুদের পাশে আছেন মহাজনরা, যাঁরা টাকা ও সরঞ্জাম সরবরাহ করেন। রাজনীতিবিদদের পাশে আছে দালাল আর কমিশনখোর সিন্ডিকেট, যারা জনগণের ঘামঝরা অর্থকে ভাগ করে শীর্ষে পাঠায়। এ যেন এক অভিন্ন কাঠামো—বন্দুকধারী দস্যু, তদারকি করা মহাজন, আর ওপরে বসা ক্ষমতাধর নেতা। সবাই একই নাটকের চরিত্র, শুধু পোশাক আলাদা।
ভয়ও সব যুগেই একই রকম। সুন্দরবনের জেলে রাতে নদীতে নামতে ভয় পান, পর্তুগিজ যুগে বণিকেরা সমুদ্রযাত্রা করতে ভয় পেতেন, আজ সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় পান। ভয় কখনো বন্দুকের, কখনো মামলার, কখনো দলীয় ক্যাডারের। ফলে মানুষ ভাবে, চুপ থাকাই নিরাপদ। কিন্তু ইতিহাস শিখিয়েছে, নীরবতা শোষকের দাপট আরও বাড়ায়। সব শোষণের মূলে থাকে স্বার্থ। মহাজন বনদস্যুকে অর্থ দেন, কারণ এতে তাঁর ব্যবসা চলে।
পর্তুগিজরা সমুদ্র দখল করেছিল নিজেদের বাণিজ্যের জন্য। রাজনীতিবিদেরা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেন নিজেদের ধনভান্ডার ভরাট করতে। জনগণের স্বার্থ থাকে বক্তৃতায়; বাস্তবে কাজ হয় উল্টো পথে।
Sangbad365 Admin 












