পীরগাছা বিএনপি সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা কর্তৃক ছাত্র জনতার উপরে বর্বরচিত হামলার এক বছর পুর্তি।

গত ৫ ই আগস্ট ২০২৪ সোমবার সারা দেশের ন্যায় রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। ঐদিন স্বৈরশাসক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এ খবর জানতে পেরে ছাত্র জনতা বিজয় মিছিল বের করে সরকারি কলেজের কাছ থেকে শুরু হয়ে পীরগাছা জে এন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

এ সময় ৭ নং ইউনিয়ন পরিষদের সামনে মিছিলটি পৌঁছালে উপজেলা বিএনপি‘র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা তার চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের ব্যক্তিগত অফিস রক্ষার্থে

১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে লাঠিসোটা ও অস্ত্রশস্ত্র হাতে হামলা শুরু করে । মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল ফলে তারা তাৎক্ষণাত হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রতিরোধ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায় এবং আমিনুল ইসলামের সঙ্গী সন্ত্রাসীরা যখন পিছু হটতে শুরু করে ঠিক তখনই আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা নিজ হাতে থাকা লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের লক্ষ্য করে চার রাউন্ড গুলি করেন।
এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং একরামুল হক নামে একজন বিএনপি‘র সাধারণ কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।সে তখন আর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং গুরুতর রক্তাক্ত হন । গুলিটি একরামুল হকের বাম হাতে গিয়ে লাগে ।
আনন্দ মিছিল করার কারণ হিসেবে আহত একরামুল হক জানান, বিএনপির কর্মী থাকার কারণে আওয়ামী লীগ দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে হয়রানি হচ্ছিলেন। এই হয়রানির মূল হোতা ছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন। আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের একটি বড় রাজনৈতিক ব্যবসা ছিল বিএনপি এবং জামাতের কর্মীদেরকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে তাদেরকে মামলা থেকে নাম কাটা বা রক্ষার নামে মোটা অংকের টাকা নেয়া। এতে জামাত এবং বিএনপির কর্মীরা মিলনের প্রতি ছিল ক্ষিপ্ত।
যেহেতু মিছিলটি পীরগাছার সরকারি কলেজ থেকে শুরু হয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এই পথিমধ্যে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের ব্যক্তিগত অফিসটি পড়ে।
যখন মিছিলটির জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল এবং ছাত্র জনতা সেখানে যখন একত্রিত হচ্ছিল এই খবরটি জানতে পারেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন। সে তাৎক্ষণিক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গাকে ফোন দেন। তাদের ফোন কলের ওডিও রেকর্ড থেকে জানা যায় প্রথমে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন বলেন নেতা–কর্মীরা খুবই উত্তেজিত হয়ে আছে মিছিল যেহেতু আমার অফিসের সামনে দিয়েই যাবে তাই সেটা মনে হয় আর রক্ষা করা যাবে না। তখন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনকে বলেন ব্যক্তিগত অফিস এবং তাকে যেন রক্ষা করেন। তাকে অনুরোধ করেন আওয়ামী সরকারের আমলে তাকে যেভাবে তিনি বিভিন্নভাবে রক্ষা করেছেন এবং ব্যবসা এবং রাজনীতিতে বিভিন্ন সুবিধাদি দিয়েছেন অনুরূপভাবে তিনি নিজেকে বাঁচার জন্য অনুরোধ করেন। আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা তখন তার চাচা আব্দুল্লাহ আল মামুদকে মিলনকে বলেন যে টাকা পয়সা দিয়ে আমি ছেলেদেরকে ম্যানেজ করতে পারবো কোন ক্ষতি করতে দিব না তোমার । তখন আব্দুল্লাহ আল মামুদ মিলন কত টাকা লাগবে জিজ্ঞেস করলে আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা বলেন দেশের পরিস্থিতি ভালো না ব্যবসা বাড়িঘর ও জীবন বাঁচানো খুব মুশকিল হয়ে যাবে ছেলেপেলেরা ভীষণ উত্তেজিত এবং ক্ষিপ্ত হয়ে আছে তাদের সংখ্যাও অনেক বেশি এদেরকে সামাল দিতে অনেক বেশি খরচ লাগবে আমাকে তিন কোটি টাকা দিলে আমি এটা ব্যবস্থা করে দিবে বলে জানান।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন বলেন, ওসি তাকে আগেই সাবধান করে দিয়েছিলেন তাই বাড়িঘর ভাঙচুর ও জীবন রক্ষার্থে ১ কোটি টাকা তিনি অফিসে রেখেছেন ছেলেপেলেদের শান্ত রাখতে। অফিস রক্ষা করে সেই ১ কুটি টাকা তিনি নিতে বলেন এবং জীবন বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করে। আরো বলেন, বাকি ২ কোটি টাকা বাড়িতে এসে নিয়ে যেতে। আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা তখন এমদাদ ভরসাকে ফোন দেন ও সামগ্রিক অবস্থা তুলে ধরেন। এমদাদ ভরসা তখন আওয়ামী লীগের ভোট গুলো বিএনপির পক্ষে নেয়ার আশ্বাসে মিছিলটি ঠেকানোর জন্য অনুমুতি দেন।
আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন এর অডিও রেকর্ডের কথোপকথনটি নিচে দেয়া হলঃ
মিলনঃ- হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো রাঙ্গা মোক শোনা যায়? ( ফিসফিস ) চাচা বিএনপির চেংড়া প্যাংড়া গুলা তো কলেজের সামনোত জড়ো হইছে!?, কি যে করে বোঝা যাইতোচে না। তুই কোনটে ?
রাঙ্গাঃ– মুই আছং এক যায়গাত, কি হইছে ক তো ?
মিলনঃ– বিএনপির চ্যাংড়াপাড়া গুলা কলেজের সামনোত জ্বড়ো হইছে, সবাই খুব ক্ষ্যাপি আছে। আওয়ামী লীগ পাইলেই চামড়া হাড্ডি কিচ্ছু থুবার নয়।
রাঙ্গাঃ– এলা কি মুই কি করিম ?
মিলনঃ– মোক বাচাও বাবা।
রাঙ্গাঃ– এমার মাতা ঠান্ডা কইরবার গেইলে টাকা পয়সা লাগবে।
মিলনঃ – কয় টাকা লাগবে বাবা ? মোর জীবনা বাচাও । মুই কি তোক এতো বছর দেখও নাই ?
রাঙ্গাঃ– তিন কুটি টাকা দে চাচা, মুই চেংড়া প্যাংড়া গুলার মুখ বন্ধ করতোছং
মিলনঃ – ওসির সাথে গতকাল রাতেই কথা হইছে।সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের লোক জনের বাড়ী ঘর ভাংচুর হইতোছে। তাই চেংড়া গুলাক থামানোর জন্য ১ কুটি টাকা তুলি আনি অফিসোত থুইছং। তুই মোর অফিস বাচায়া ১ কুটি টাকা নিয়ে নে। বাকী টাকা বাড়িত আসি নেইস।
রাঙ্গাঃ– চাচা ১ টাকাও কিন্তু কম নিবার নাও।
মিলনঃ – মোক বাচাও বাবা, টাকা নিয়া চিন্তা করিস না। অফিস থাকি টাকাটা নিয়া তুই মোর বাড়িত আয়।
রাঙ্গাঃ– আচ্চা দেখতোচং।
আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা তখন নিজ বাড়িতে অবস্থান করতেছিলেন এবং তার পোষ্য সন্ত্রাসী বাহিনীদেরকে লাঠিশোটা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আসতে বলেন এবং তিনিও তার লাইসেন্স করা বন্দুকটি সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে চলে আসেন। ততক্ষণে আনন্দ মিছিলটি শুরু হয়ে যায় এবং পদযাত্রা শুরু করে। মিছিলটি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের ব্যক্তিগত অফিসের সামনে আসলে প্রথমে আমিনুল ইসলামের রাঙ্গার সন্ত্রাসী বাহিনী মিছিলের উপর হামলা শুরু করে। এবং আনন্দ মিছিল কারী বিএনপির কর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এক পর্যায়ে আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা অবস্থা বেগতিক দেখে চার রাউন্ড গুলি করে। বিএনপির কর্মীরা তাদেরই নেতা দ্বারা তাদের উপরে যখন এভাবে বন্দুক ও লাঠিশোঠা দ্বারা আক্রমন দেখে হতভম্ব হয়ে যায় ।
জনমনে প্রশ্ন, আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার বাড়ি থেকে ইউনিয়ন পরিষদের অফিসটি আনুমানিক আধা কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। অগ্রিম খবর এবং অগ্রিম প্রস্তুতি ব্যাতিত তার পক্ষে তার লাইসেন্স করা বন্দুকটি গুলি ভর্তি করে নিয়ে আসা কোনভাবেই সম্ভব না । বোঝাই যাচ্ছে সে তার চাচা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনকে রক্ষা করতেই বন্দুকটি ব্যবহার করেছেন।
বাংলাদেশের অস্ত্র ব্যবহারের আইন অনুযায়ী, লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে শুধুমাত্র নিজের আত্মরক্ষা করা যাবে। এই অস্ত্র দেখিয়ে কাউকে ভয়–ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না, অন্যের জীবন বা অন্যের কোন সম্পত্তি রক্ষা করার কোন সুযোগ নাই। নিজের জীবন রক্ষার্থে অস্ত্র ব্যবহার করলে তাৎক্ষণিক থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করতে হবে। সেক্ষেত্রে উনি সবগুলো নিয়মই ভঙ্গ করেছেন। উনি চাচার সম্পত্তি( কার্যালয়) রক্ষা, চাচার জীবন রক্ষা ও আনন্দ মিছিলরত বিএনপি‘র কর্মীদেরকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েছেন।
Sangbad365 Admin 












