দীর্ঘদিন ধরে পীরগাছা উপজেলায় ঠিকাদারি সমিতির সভাপতি ক্ষমতাবান আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। বড় বড় টেন্ডার গুলো সে নিজে বাগিয়ে নেয় ও ছোট কাজ গুলো অন্যান্য ঠিকাদারদের মাঝে ২০% কমিশন নেয়ার শর্তে বিতরন করেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করে ঠিকাদার রাসেল, রবি লাহিড়ী, ৭ নং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান রেজা ও জাহাঙ্গীর আলম জাহান, আহবায়ক পীরগাছা উপজেলা যুবদল ।
এলজিইডি ডিপার্টমেন্টের রাস্তা নির্মাণের যত কাজ আসে সবগুলান একচেটিয়া পেয়ে থাকে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান রেজা । এখানে উল্লেখ্য যে নিজেদের ভিতরে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন কোন টেন্ডার কে নিবে । যদি একটি ঠিকাদারি কাজ আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা নেয় তবে পরবর্তী ঠিকাদারি কাজটি উনি,মোস্তাফিজার রহমান রেজার জন্য বরাদ্দ রাখেন । নিজে নাম মাত্র অংশগ্রহণ করে মোস্তাফিজার রহমান রেজাকে কৌশলে পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে থাকেন ।
এছাড়াও অত্র এলাকায় সকল স্কুল ও কলেজের যত ভবন নির্মাণের কাজ আসে তা একচেটিয়া ভাবে উপজেলা সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা বরাদ্দ নিয়ে থাকেন । টেন্ডারটি পাওয়ার পরে সে কাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্যান্য ঠিকাদারদেরকে কমিশনের মাধ্যমে কাজটি দিয়ে থাকেন। ফলে সে একই সময়ে একাধিক ঠিকাদারি কাজ ধরতে পারেন এবং সে কাজগুলো যেহেতু উনি কমিশনের মাধ্যমে অন্যান্য ঠিকাদারের হস্তান্তর করে থাকেন, তাই কাজ উঠানো নিয়ে তার কোন টেনশন থাকে না । উনি ৭০% কমিশন নিয়ে থাকেন।
যেহেতু ঠিকাদারি কাজটি ২-৩ হাত ঘুরে তারপর বাস্তবায়ন হয় তাই কাজের মান নিম্নমুখী হয়। সে ক্ষেত্রে এই নিম্নমানের কাজ সরকারি নিরীক্ষায় যেন ধরা না পড়ে সেজন্য আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা উপজেলায় দায়িত্বগত ইঞ্জিনিয়ারদেরকে সাইট পরিদর্শনের জন্য যেন না যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় হুমকি ধামকি দিয়ে থাকেন। ভালো রিপোর্ট দেয়ার জন্য বলেন । রিপোর্ট ভালো না হলে উনি ইঞ্জিনিয়ারদেরকে জীবন মাসের হুমকিও দেন। ইঞ্জিনিয়াররা বাধ্য হয়েই সাইট পরিদর্শন না করেই ভালো মানের রিপোর্ট দিতে বাধ্য হন। ফলে কিছুদিন যেতে না যেতেই নির্মানাধীন সাইট অবহেলায় অযত্নে ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে আবারো একই কাজ করান এতে সরকারের যেমন টাকা পয়সা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে এলাকার মানুষও প্রয়োজনীয় সেবা টুকু পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে উপজেলার পুরাতন ঠিকাদার রবি লাহিড়ী জানান আমরা সবাই ভাই ভাই আমাদের ভিতরে কোন ভেদাভেদ নাই। তাই আমরা মিলেমিশে টেন্ডার ভাগাভাগি করে এলাকার উন্নয়নে অংশগ্রহণ করি । তবে যেহেতু রাঙ্গা ভাই আমাদের সিনিয়র এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রেজাও আমাদের সিনিয়র তাই তাদের আমরা তাদেরকে কিছু সম্মানী দিই ।এ নিয়ে আমাদের ভিতরে কোন মনোমালিন্য হয় না। নির্মাণ কাজের জন্য সারাদিন রোদে পুড়ে কাজ করে লাভের কিছু অংশ যদিও বড় ভাইদের কে দিতে হয় এটা আমাদের কিছুটা কষ্ট লাগলেও আমরা মেনে নিয়েছি। তবে এই লাভের অংশ যদি কমিশন হিসেবে বড় ভাইদেরকে না দিয়ে আমরা যদি উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করতে পারতাম তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হত। যার ফলাফল জনগণ সরাসরি ভোগ করতে পারতো এবং দেশের টাকা অনেক বাচতো।
এই বিষয়ে ঠিকাদার রাসেল বলেন আমি ভাই এই লাইনে নতুন এসেছি আমি আসার পর থেকে দেখে আসছি যে কমিশন দিয়েই আসতে হয় আমি সেভাবেই চলছি তবে কমিশন না দিতে হলে আমরা আরো আরো ভালো কোয়ালিটির কাজে ডেলিভারি দিতে পারতাম। আমরা ভাই ছোট ছোট কাজ পাই সে কাজে যখন আবার কমিশন দিতে হয় অনেক কষ্ট লাগে ভাই।
ঠিকাদারী কাজে কমিশনের ব্যাপারে সুলতান মাহমুদ ডায়েল বলেন ঠিকাদারি কাজে কমিশন ব্যাপারটা এমন না । এখানে ঠিকাদাররা খুশি হয়েই আমাদের উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গাকে ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান রেজাকে কিছু টাকা দিয়ে থাকেন দল পরিচালনার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে।
এখানে উল্লেখ্য যে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার চাচা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন এই ঠিকাদারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং কমিশনের একটি বড় টাকা উনি নিজের পকেটে নিয়ে থাকেন । এ ব্যাপারে ঠিকাদাররা আপত্তি জানালেও আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ব্যাপারটিকে জোর গলায় চাপিয়ে দেন। কমিশন নিয়মিত দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এবং বলেন যে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে এইসব টেন্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে এখন আমাদেরকে তার ঋণ শোধ করতে হবে।
*****
আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা- উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান- মোস্তাফিজার রহমান রেজা
জাহাঙ্গীর আলম জাহান,-আহবায়ক পীরগাছা উপজেলা যুবদল ।
রাঙ্গা উপজেলায় দায়িত্বগত ইঞ্জিনিয়ার
উপজেলার পুরাতন ঠিকাদার রবি লাহিড়ী
ঠিকাদার রাসেল
সুলতান মাহমুদ ডায়েল
রাঙ্গার চাচা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন